থাইল্যান্ডে সম্প্রতি রাজধানী ব্যাংককের কাছের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে একজনের দেহে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সরকার হাজার হাজার মানুষকে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নেয়।
ওই বাজারের বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নাগরিক। সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে বেড়ে গেছে ঘৃণা বক্তব্য। একইসঙ্গে থাইল্যান্ডে লাখো অভিবাসী শ্রমিকের চিকিৎসা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তায় নিয়োজিত থাই সংগঠন ‘লেবার প্রটেকশন নেটওয়ার্ক’ এর সদস্য সমপং বলছেন, “কোভিড-১৯ ছড়ানোর জন্য মিয়ানমারের লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু ভাইরাস তো কখনও বৈষম্য করে না।”
“তারপরও মানুষের বদলে যাওয়া ভাবাবেগের বাস্তব পরিণতিতে মিয়ানমার থেকে আসা কর্মীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাদেরকে বাসে, মটরসাইকেলে, ট্যাক্সিতে চড়তে দেওয়া হচ্ছে না, যেতে দেওয়া হচ্ছে না কর্মক্ষেত্রে।”
স্যোশাল মিডিয়া ভরে যাচ্ছে ঘৃণা ভরা বক্তব্যে। অনেকে কোভিড আক্রান্ত অভিবাসী শ্রমিককে চিকিৎসা না করা এবং তাদেরকে থাইল্যান্ডে নিয়ে আসা লোকজনদের শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছেন।
বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করার সময় যেমন সংক্রমণের জন্য বিভিন্ন দেশে বিদেশিদের দায়ী করা হচ্ছিল, সেই প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে থাইল্যান্ডের এই মিয়ানমার বিদ্বেষে।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা এ সপ্তাহে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা থাইল্যান্ডে আবার এ ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপের জন্য অবৈধ অভিবাসীদের দায়ী করেছেন।
থাইল্যান্ডের ভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্স অবশ্য অভিবাসীদেরকে সহমর্মিতা দেখানোর পক্ষেই কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি তেমন দেখা যাচ্ছে না।
স্বাধীন স্যোশাল মেডিয়া মনিটরিং ফর পিস গ্রুপ রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা ইউটিউব, ফেইসবুক এবং টুইটারে শত শত ‘হেট স্পিচ’ বা ঘৃণা বক্তব্য দেখতে পেয়েছে। বর্ণবাদী ভাষাতেও করা হয়েছে একাধিক মন্তব্য; যেগুলো বৈষম্য এবং জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে পারে।
কোভিড-১৯: থাইল্যান্ডে সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ছড়াচ্ছে ভাইরাস
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোভিডের সঙ্গে বাড়ছে একে অপরকে দোষাদোষী
অনলাইনের এই ঘৃণা-বিদ্বেষ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা ডেকে আনে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পিস গ্রুপ। যদিও নেতিবাচক বক্তব্যের ঝড়ের মধ্যে কাউকে কাউকে আবার মিয়ানমারের কর্মীদের পক্ষেও কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
ফেইসবুক বলছে, তারা কিছু কিছু ঘৃণা বক্তব্য ক্ষতিকারক হতে পারে বলে তা সরিয়ে নিয়েছে। টুইটার বলেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অন্যদিকে, ইউটিউব এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
থাইল্যান্ড কিংবা মিয়ানমারের সরকারি কোনও মুখপাত্রও স্যোশাল মিডিয়ায় ঘৃণা বক্তব্য ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেননি।
থাইল্যান্ডের সরকারি হিসাবমতে, দেশটিতে আছে মিয়ানমারের প্রায় ১৬ লাখ শ্রমিক। এ সংখ্যা দেশটিতে মোট অভিবাসী শ্রমিকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। তবে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের কারণে সেখানে মিয়ানমারের শ্রমিকদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।