ক্যাটাগরি

বন্যার পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কুড়িগ্রামের সবুজপাড়া

পরপর পাঁচ দফা বন্যায় নষ্ট হয়েছে মাঠের ধান। এখন সেই
মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় সবজি লাগিয়ে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তারা। হাঁস-মুরগি
ও ভেড়া পালনেও ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছে।

সরজমিনে সবুজ পাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, দুধকুমর, গঙ্গাধর
ও ব্রহ্মপূত্র নদের মোহনায় অবস্থিত ওই গ্রামের মানুষ বারবারই বন্যাকে মোকাবেলা করে
আসছে। কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যায় বহু পরিবারের আমনের বীজতলা, মাঠের ফসল, বাড়ির চারপাশের
শাকসবজি ও হাঁস-মুরগির ব্যাপক ক্ষতি হয়। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নষ্ট হয়ে যায় ঘরবাড়ি ও
গবাদিপশুর খাদ্য খড়ের গাদা।

এই ক্ষতি কমাতে গ্রামের ১৭০টি পরিবারের লোকজন বিভিন্ন
প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তারা শুরু করেছে বাড়ি বাড়ি বিষমুক্ত সবজিচাষ, হাঁস-মুরগি
ও ভেড়া পালনের কাজ। এতেই পাল্টে যেতে থাকে তাদের জীবনমান।

সমষ্টিগতভাবে উদ্যোগ নেওয়ায় সবুজপাড়া গ্রাম এখন সবুজে
পরিণত হয়েছে।

এই গ্রামের প্রয়াত ছাত্তার আলীর স্ত্রী আহিলা বেগম বলেন,
“বাড়ির উঠোনে চাল কুমড়া লাগিয়েছি। ইতিমধ্যে চার হাজার টাকার বিষমুক্ত কুমড়া বিক্রি
করেছি। নিজেরাও খাচ্ছি।

“এছাড়াও একটি ভেড়া পেয়েছিলাম। গত দুই বছরে পাঁচ হাজার
টাকায় একটি বিক্রি করে ঘর ঠিক করেছি। এখন চারটা ভেড়া রয়েছে।”

একই গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী ছবুরা বেগম ও আমিনুলের
স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, আগে তারা হাট থেকে সার কিনে আনতেন। এখন গোবর দিয়ে নিজেরা
সার তৈরি করছেন। কীটনাশক ফাঁদ দিয়ে পোকা ধরছেন। এছাড়া শুকনো নিমপাতা দিয়ে সবজি ক্ষেত
পোকা ও বিষমুক্ত রাখছেন।

সবুজপাড়া গ্রামের যুবক সদরুল আলম বলেন, সবুজপাড়া গ্রাম
এখন সবুজে ভরে গেছে। এই গ্রামের মানুষ অল্প খরচে শাকসবজি চাষ করেছে। বিভিন্ন সরকারি
বেসরকারি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে সহযোগিতা নিচ্ছে কৃষকরা। ধান চাষ করতে গিয়ে চাষিরা
যে বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তারা।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, দুধকুমর
নদীর কারণে সবুজপাড়া গ্রাম প্রতিবছর বন্যায় প্লাবিত হয়। এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তাদের
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ’ এই গ্রামে বিভিন্ন
সচেতনতামূলক ও আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় এই গ্রামে ‘বৈপ্লবিক’ পরিবর্তন
সাধিত হয়েছে। বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠে তারা শাকসবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ভেড়া পালন করে
নিজেদের পরিবারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

‘ফ্রেন্ডশীপের’ এএসডির প্রকল্পের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম
মল্লিক বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদ বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ রোধ, পারিবারিক নির্যাতন
বন্ধ, জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ধারণা, জিডি করার কৌশল, শিক্ষামূলক আলোচনাসহ দুর্যোগ
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবুজপাড়া গ্রামসহ কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী
উপজেলায় ২৪টি গ্রামে অসহায় দুস্থ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে ট্রানজিশন
ফান্ড প্রজেক্ট (এএসডি)।