শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়ন পরিষদ
চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আটজনের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গোবরা
ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধূরী টুটুল।
আগামী ৯ জানুয়ারি নতুন করে আবার যাচাই-বছাই বোর্ডে
হাজির হতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই উপজেলার আট জনকে ডেকেছেন।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদন ছাড়া যেসব বীর
মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন, তাদের তালিকা আগামী ৯ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই করবে
সরকার।
তবে
কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তা বা মন্ত্রণালয়ের
স্বীকৃত ৩৩ ধরনের প্রমাণকে অন্তর্ভুক্ত থাকলে, তিনি যাচাই-বাছাই এর আওতাবর্হিভূত
থাকবেন বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেন, গোবরা ইউনিয়নে
২০০৩, ২০০৫ ও ২০১৭ সালে তিন দফা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের পর থেকে ১৯ জন
মুক্তিযোদ্ধা ১৫ বছর ধরে ভাতা পেয়ে আসছেন। নতুন করে তাদের যাচাই-বাছাইয়ের চিঠি দেওয়া
হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার মুত্যু হয়েছে। আটজন জীবিত আছেন, যাদের দুই
জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী। তারা তদ্বির করে যুক্তিযোদ্ধা হননি। এছাড়া
আগের তিনটি যাচাই-বাছাইতে তারা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
“এখন অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে
রোগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই নতুন যাচাই-বছাইয়ে জীবিত তিন
সহযোদ্ধা নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটিতে হাজির হওয়া অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য।”
তাই মুক্তিযোদ্ধারা যাচাই-বাছাই থেকে অব্যাহতি
চেয়েছেন, বলেন শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের
সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গোবরা ইউনিয়নের মো. হাবিবুর রহনমান মৃধা বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাতার আশায় সেদিন মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। দেশ মাতৃকার
মুক্তির জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তারপর তিন বার আমাদের যাচাই বাছাই হয়েছে। সেখানে
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আমাদের সবুজ তালিকা ও মুক্তিবার্তায় নাম আছে। মুক্তিযুদ্ধ
মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ আমাদের
প্রত্যেকের কাছে রয়েছে।”
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটেও তাদের তালিকা
রয়েছে বলে তিনি জানান।
হাবিবুর রহনমান আরও বলেন, “সর্বশেষ ২০১৭ সালের
যাচাইয়েও আমার উত্তীর্ণ হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের
ঠেলাঠেলিতে লাল তালিকায় আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি। তাই আগামী ৯ জানুয়ারি নতুন
করে যাচাই-বছাই বোর্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেকেছেন।”
আব্দুল হালিম ফকির বলেন, “নতুন যাচাই-বাছাইয়ে তিনজন
সহযোদ্ধাকে হাজির করতে বলা হয়েছে। এটি খুবই কঠিন কাজ। ইতিমধ্যে অধিকাংশ সহযোদ্ধা
মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া জীবিতরা সয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকে রোগ-শোকে স্মৃতিশক্তি
হারিয়েছেন। তাই এই অত্যন্ত কঠিন কাজ থেকে আমাদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
মো. আতিয়ার রহমান শেখ বলেন, “আগের তিনটি যাচাই-বাছাইয়ে
সহযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার
গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আমরা ২০১৭ সালের
সর্বশেষ যাচাই-বাছাইয়ে আমরা উত্তীর্ণ হই। এখন আমাদের এই যাচাই-বাছাই থেকে অব্যহতি
দেওয়া হোক।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই
কমিটির সদস্য সচিব ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান
বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল নতুন যাচাই-বাছাইয়ের
নির্দেশনা দিয়েছে। আমাকে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। তাই তাদের যাচাই-বাছাই
থেকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই।”
১৯ ডিসেম্বর নয়, অনুমোদনহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট যাচাই ৯ জানুয়ারি