ক্যাটাগরি

প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, দাবি শফীর শ্যালকের

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা সত্য মামলা করেছি।

“জুনাইদ বাবুনগরী যদি অপরাধী না হয়ে থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যক্তিগত রাগ, বিরাগ নেই। তবে যদি অপরাধী হয়ে থাকেন এবং তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তবে তার শাস্তি ও ফাঁসি দাবি করছি। তাদের এত ভয় কেন, তারা যদি দোষী না হয়ে থাকেন তদন্তে তা প্রমাণ হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “হুজুরের পরিবারের কেউ রাজনীতি করেন না। মামলার বাদিও রাজনীতি করেন না। এটা হত্যা মামলা। সমস্ত দুনিয়া সোশাল মিডিয়ায় দেখেছে কিভাবে মাদ্রাসায় হুজুরের কক্ষে হামলা হয়েছে। যেটা সবাই দেখেছে, তা ঘটেনি বলে তারা দাবি করছে। হুজুরের পরিবার, তারা দুই ছেলে এবং নাতিদেরও বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

আহমদ শফী চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব হারানোর পরদিন গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে শফীর শ্যালক মো. মইন উদ্দিন একটি মামলা করেন।

মামলায় ৩৬ জনকে আসামির অধিকাংশই হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে মাওলানা মো. নাসির মুনিরকে। আর দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার জন্য আলোচনায় আসা হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে।

এরপর গত বুধবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী দাবি করেন, শাহ আহমদ শফীর ‘স্বাভাবিক মৃত্যুকে’ হত্যা আখ্যায়িত করে হওয়া মামলাটি ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’।

লিখিত বক্তব্যে মঈন উদ্দিন বলেন, “আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সুপরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানের দোসর জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা হত্যা করেছে। বাবুনগীর মত একজন বয়োবৃদ্ধ আলেম সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল।

“১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কি ঘটেছিল তা আপনারা সবাই জানেন। ‘কওমী ভিশন’ এর মাধ্যমে জুনাইদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসায় অবস্থান করে সকল ঘটনা লাইভ প্রচার করেছেন। আপনারা দেখেছেন, কিভাবে শফী হুজুরের রুম ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে। হত্যার জন্য বারবার হুমকি প্রদান করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে আমি বাদি হয়ে কোর্টে মামলা করেছি। কোর্ট পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে দোষীরা চিহ্নিত হবে। কিন্তু জুনাইদ বাবুনগরী, মামুনুল হক গংরা একের পর এক নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য। মামলা প্রত্যাহারের জন্য কেন হুমকি দিচ্ছেন?

“সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, মামলাটির যাতে দ্রুত বিচার হয়। তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, অন্যায়কারীরা যাতে চিহ্নিত হয়, চিহ্নিত অন্যায়কারীদের যাতে যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন হয়।”

১৭ ডিসেম্বর মামলা করার দিনই ফেইসবুকে মঈন উদ্দিন ও মাঈনুদ্দিন রুহীকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দু’জন দাবি করেন।

আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা থাকলেও ‘নিরাপত্তা হুমকির’ কারণে তিনি আসতে পারেননি বলে দাবি করেন মঈন উদ্দিন।

বুধবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঈন উদ্দিন বলেন, “জানতে পেরেছি, মাদ্রাসার অনেক নিরীহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জুনাইদ বাবুনগরী ব্যক্তিগতভাবে উস্কানি দিচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাটহাজারী মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করেছে।”

মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “মাদ্রাসার শিক্ষকরা বড় হুজুরকে করা সেই জুলুমে অংশ নেননি। কিছু সংখ্যক বহিরাগত এসব করেছিল। হাটহাজারী মাদ্রাসাকে এসবে জড়ানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে।

“ওসি হাটহাজারীর মধ্যস্থতায় সেদিন মাদ্রাসাকে থেকে বড় হুজুরকে মেডিকেলে পাঠানো হয়। শফী হুজুর শুরার বৈঠক ডাকেননি। শুরার সদস্য ১৭ জন। দু’জনকে নিয়ে শুরার বৈঠক হয় না। যে দু’জন উপস্থিত ছিলেন তারা মাদ্রাসার নন। যখন শফী হুজুরকে চিকিৎসার জন্য বের করা যাচ্ছিল না তখন তারা বাইরে থেকে কিভাবে মাদ্রাসায় ঢুকেছিলেন?”

কওমী মাদ্রাসা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে মঈন উদ্দিন বলেন, “দেশি-বিদেশি অর্থের লোভে তারা মিথ্যাচার করছে। আহমদ শফীর গড়ে তোলা অরাজনৈতিক হেফাজতে ইসলামের নাম ব্যবহার করে আলেম নামধারী গোষ্ঠী বিশেষ মিথ্যাচারের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।

“কওমী ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কওমীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। জুনাইদ বাবুনগরীদের মতো দেশবিরোধী, হত্যাকারী, রাজাকাররা হেফাজতের দায়িত্ব বহন করলে তাদের মিথ্যাচারে মানুষের ঈমানী শক্তি নষ্ট হবে। দেশের মানুষ কওমী আলেমদের যে সম্মান করে তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”

এ বিষয়ে দেশের আলেম-ওলামাদের সত্য বলে অন্যয়াকারীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তিনি।

সম্প্রতি আহমদ শফীর জানাজা পরিচালনাকারী বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায় তিনি পিতার মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ বলে বক্তব্য রেখেছেন।

এ বিষয়ে মঈন উদ্দিন বলেন, “জুনাইদ বাবুনগরী ও তার দোসররা আমার ভাগিনাকে (ইউসুফ) হত্যা করবে বলে তার তিন ছেলেকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সাজানো বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে। ইতিমধ্যে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমার ভাগিনা কোন পরিবেশে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছিল তা জানিয়েছে।”

আহমদ শফীর দুই ছেলেকেই তার জানাজায় অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয় দাবি করে মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “স্থানীয়দের চাপে মাওলানা ইউসুফকে জানাজা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলেও আনাস মাদানিকে জানাজায় আসতে দেওয়া হয়নি।”

মঈন উদ্দিন বলেন, “আনাস জানাজায় আসলে একসাথে দুইটা জানাজা হবে বলেছিল জুনাইদ বাবুনগরী। মামুনুল হক বাহিনী ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় আমার সামনে ভাগিনা আনাস মাদানীর উপর হামলা চালায়। অনেক কষ্টে আমি তাকে রক্ষা করি।

“জানাজায় ইউসুফ বক্তব্য রাখলেও জুনাইদ বাবুনগরীর দোসররা তার বক্তব্য সীমিত ও নির্ধারিত করে দিয়েছিল। ফলে আমার ভাগিনা তার পরিবারের অন্তরে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো সেদিন বলতে পারেনি।”

সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সারওয়ার আলম, শামসুদ্দিন আফতাব, ক্বারী তৌহিদুল আলম, হোসাইন আহমদ, ওজায়ের উল্লাহ, আবুল কাশেম ও মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন।


আহমদ শফীকে ‘হত্যার’ অভিযোগে মামুনুলসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
 


আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে মামলা ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’: বাবুনগরী