গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে বাড়ি হলেও চট্টগ্রামে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসা করতেন
আব্দুল হাই। আল-হোসাইন শিপিং লাইন নামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল হাই হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে গত বছরের ১২ এপ্রিল ভর্তি
হন চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে। প্রথমদিকে মাসখানেক তার এক সন্তান যাওয়া-আসা
করলেও দেড় বছর ধরে স্বজনদের দেখা মিলছে না হাসপাতালে।
এদিকে হাসপাতালে বিল জমে গেছে বিপুল পরিমাণ। উপায় না পেয়ে গত ৬ ডিসেম্বর
বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ম্যাক্স হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ দাশ গুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে জানান, গত বছরের ১২ এপ্রিল ডা. আশীষ দে’র অধীনে হাসপাতালের এইচডিইউতে ভর্তি
করানো হয় আব্দুল হাইকে। বিভিন্ন সময়ে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হয়েছে।
রঞ্জন প্রসাদ বলেন, “আব্দুল হাইকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তার এক সন্তান
মাসখানেক সাথে ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে টাকাও পরিশোধ করেছেন। তবে হাসপাতালে এএসে দেখা
করছেন না। যার কারণে আব্দুল হাই এখন একা আছেন হাসপাতালে।
“দেড় বছরে বেশি সময় ধরে হাসপাতালে বিল এসেছে ৫১ লাখ টাকা। পরিবারের পক্ষ
থেকে ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিভিন্ন সময়ে পরিশোধ করলেও কোনো স্বজনের দেখা মিলছে না।
তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কখনও তারা ফোন রিসিভ করেন, কখনও করেন না।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে আব্দুল হাই মোল্লার ফুসফুসেও সমস্যা দেখা দিয়েছে;
প্যারালাইজ হয়ে যাচ্ছে শরীর।”
যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে বলে জানান
তিনি।
চকবাজার থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, হাসপাতালের অভিযোগ পেয়ে তিনি নিজেই
গেছেন হাসপাতালে আব্দুল হাইকে দেখতে। চিকিৎসাধীন আব্দুল হাই কোনো কথা বলতে পারেন না।
“আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি আব্দুল হাইয়ের দুই বিয়ে। প্রথম পক্ষের একমাত্র
ছেলে শফিকুল ইসলাম শুভ। তিনিই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের
বিল পরিশোধ করেছেন।
“আর দ্বিতীয় পক্ষে তিন মেয়ে এক ছেলে। তারা সবাই ভালো অবস্থায় আছেন। আমি
ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তার এক মেয়ে খুলশীতে থাকেন, তিনিও বাবার বিষয়ে
কোনো সহায়তা করতে রাজি না। পাশাপাশি অন্যরাও তাদের বাবার প্রতি কোনো আগ্রহ না দেখিয়ে
উল্টো পুলিশকে অসহযোগিতা করছেন।
ওসি রুহুল বলেন, “আমরা যতটুকু জেনেছি আব্দুল হাই তার সম্পদ বন্টন করে দিয়েছেন
সন্তানদের মধ্যে। সে সম্পদ বন্টনে সন্তানদের মধ্যে মনোমালিন্য, তাই তারা তাদের বাবার
প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।”
আব্দুল হাইয়ের ছেলে শফিকুল ইসলাম শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,
অর্থনৈতিক বিষয়ের কথা চিন্তা করে তিনি দূরে আছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি অনেক টাকা পরিশোধ
করেছেন।
তিনি বলেন, “আমার বাবা উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করেছেন। এখন আমার বয়স ৪৩ বছর,
সাড়ে তিন বছর বয়সে আমার মাকে ছেড়ে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। মোট পাঁচটি বিয়ে করেছেন তিনি।
আরেক ঘরে তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”
শফিকুল বলেন, গতবছর তার বাবা অসুস্থ হওয়ার আগে ছিলেন পঞ্চম স্ত্রীর সঙ্গে।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তার কিছুদিন পর থেকে সে স্ত্রীও
কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না।