পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রতিবাদ জানালেও পরিচালকদের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত সংগঠনটি বলছে, তারা অনন্য মামুনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন না।
পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনন্য মামুনের কর্মকাণ্ডে পরিচালক হিসেবে আমরা খুবই লজ্জিত; আমরা এটাকে সমর্থন করি না।
“ছবির বিষয়বস্তু রাজনৈতিক হতে পারে, ছবিতে কারও সমালোচনাও থাকতে পারে; কিন্তু ছবিতে তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা শুধু নিন্দনীয়ই নয় একেবারেই পরিত্যাজ্য।”
‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ভাষার জন্য পরিচালকদের ‘মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না’ বলে আশঙ্কা করছেন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পরিচালক গুলজার।
“আমরা বরং চাইব এটা যাতে না ঘটে। এমনিতেই মিডিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ ভালো ধারণা করেন না, এই ধরনের ভাষা যখন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয় তখন মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না। আমরা এর পক্ষে না।
“আইনকানুন নিজের গতিতে চলবে, সেটা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।”
পরিচালক সমিতি অনন্য মামুনের পাশে না থাকলেও তার গ্রেপ্তারকে ‘শৈল্পিক স্বাধীনতার পরিপন্থি’ হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্র সংগঠকদের কেউ কেউ।
চলচ্চিত্র সংগঠক বেলায়েত হোসেন মামুন ফেইসবুকে লিখেছেন, “চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা আমাদের দেশে নেই; কথাটি বলছি বেশ অনেকদিন হলো কিন্তু চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষজন বিষয়টি আমলে নেন না। আমলে নিন, কারণ লোকজন জেলে যেতে শুরু করেছে।
…যে আইনের ক্ষমতাবলে এটা ঘটানো গেলো তা একটি খারাপ আইন। এই আইন শিল্পীর শৈল্পিক স্বাধীনতার পরিপন্থি। যদি লড়তে হয় তবে এ টাইপের যতগুলো আইন আছে সে গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করুন।”
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেলিব্রেটি প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত ছবিটি ওটিটি প্লাটফর্ম আই থিয়েটারে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায়।
মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায় পরিচালক ও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করা শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করেন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. নসিরুল আমিন।
সেখানে বলা হয়, ‘নবাব এলএলবি’ নামের ওই চলচ্চিত্রে ধর্ষণের শিকার এক নারী বিচারের আশায় থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা (অভিনেতা শাহীন মৃধা) তাকে (ভিকটিম) অরুচিকর, বিকৃত প্রশ্ন করেন, যাতে পুলিশকে অত্যন্ত খাটো করে দেখানো হয়েছে। এতে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
চলচ্চিত্র সংগঠক মামুন বলছেন, “চলচ্চিত্রের গল্পে কোনো পেশাজীবীর খারাপ আচরণের অর্থ এই নয় যে, ওই পেশাজীবীদের পুরো সমাজই খারাপ। গল্প বলার ক্ষেত্রে এই টাইপের ‘লাল ফিতা’ বেঁধে দিতে থাকলে বাংলাদেশে সত্যিকারের চলচ্চিত্র আর কখনও হবে না।”
তবে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলছেন ভিন্ন কথা।
“আমাদের কাজী হায়াত ভাইয়ের ছবিতে অনেক স্ট্রং সংলাপ থাকে; সন্ত্রাসীদের নিয়ে, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। তারপরও হায়াত ভাইয়ের তো কিছু হয়নি।
“অনন্য মামুনের ছবিতে অরুচিকর ভাষা ব্যবহার করা… এটা করেছে শুধু তার জন্য, এতে অন্য কোনও ইঙ্গিত আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।”
এ বিষয়ে ছবির প্রযোজক আজমত রহমানের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।