তিনি বলেছেন, “রাজনীতির মাঠে এখন আর রাজনীতিবিদরা নেই।
রাজনীতির মাঠে খেলছে আমলারা, রাজনীতিবিদরা লাইনে বসে খেলা দেখছেন।”
রোববার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে
এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের বলেন, নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিরা এখন দেশ পরিচালনায় উপেক্ষিত।
“কাজকর্মে এমপি সাহেবদের খবরই নেই, আর সচিব সাহেবরা সব
কাজ করেন, মন্ত্রী মহোদয়রা শুধু জানতে চান।”
তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের দুঃখ-কষ্ট সবচেয়ে
ভালো বোঝেন। তারাই জনগণের বেশি উপকার করতে পারেন।
“আমলারা হচ্ছে রোবটের মতো, তারা একটি গণ্ডির ভেতরে কাজ
করতে অভ্যস্ত। আমলারা রাজনীতিবিদদের মতো সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝে না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে কাদের বলেন, “নির্বাচিত
প্রতিনিধিদের মূল্য দিন। জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে আমলাদের দিয়ে দেশ পরিচালনা
কখনোই মঙ্গলজনক হবেনা।”
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের ক্ষমতায় থাকার
সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তার ভাই কাদের বলেন, “তখন উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ
চেয়ারম্যানদের অধীনে আমলারা কাজ করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনায় কাজ করেছেন
আমলারা।
“কিন্তু এখন উল্টে গেছে সবকিছু। উপজেলা চেয়ারম্যান
হচ্ছেন ‘চেয়ারম্যান’ মানে চেয়ারে বসে থাকবেন। আর উপজেলা পরিষদ চালাচ্ছেন উপজেলা
নির্বাহী অফিসার। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কথা ইউএনও সাহেব শুনলে ভালো, না শুনলে
কিছুই করার নেই।”
জনপ্রতিনিধিদের যদি দেশ পরিচালনা করতে না পারাটা ‘সংবিধান
পরিপন্থি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৯১ সালের পর থেকে জাতীয়
পার্টিকে ধ্বংস করতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের।
“জাতীয় পার্টিকে অনেক দুর্বল করেছে। কিন্তু
পল্লীবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা আর জাতীয় পার্টির প্রতি গভীর আস্থার কারণে
জাতীয় পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
“দেশের মানুষ দুটি রাজনৈতিক দলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি
পেতে চায়। জনসাধারণ চায় জাতীয় পার্টির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক। কারণ,
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে তুলনামূলকভাবে অনেক
বেশি সুশাসন ছিল।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ
বাবলু বলেন, “এখন চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারী ও শিশু নির্যাতন অনেক
দিন ধরেই চলছে এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।
“করোনার প্রকোপ বাড়ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা
নেই। প্রচণ্ড শীতে একটি কম্বলের জন্য মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। আবার কেউ কেউ
হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।”
যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের পরিচয়
প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগ আয়োজিত পোস্টার ও
ক্যালেন্ডার বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের খুলনা বিভাগীয়
অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভরায়, আব্দুস
সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, নাজনীন
সুলতানা, যুগ্ম মহাসচিব শেখ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।