উঠে এলো তার ছেলেবেলা, বার্সেলোনা, নেইমার, সুয়ারেসসহ আরও অনেক প্রসঙ্গ। ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার দিলেন খোলামেলা জবাব।
ছেলেবেলার উপহার
সব সময়ই এটা ছিল ফুটবল, জুতা কিংবা ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত কিছু। একটা বলের কথা মনে আছে, একটা টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম। এটা খুব দামি ছিল আর তা পাওয়া আমাদের জন্য বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু বাবা-মা নিজের মতো একটা পথ বের করে বড় দিনে সেই বল উপহার দিয়েছিলেন। নিওয়েলসে একটা জার্সির কথাও মনে আছে।
যে অ্যাথলেটে মুগ্ধ
রাফায়েল নাদাল, ফেদেরার, লেব্রন জেমস… প্রতিটা খেলায় একজন না একজন খেলোয়াড় আছে যে সেরা এবং প্রশংসনীয়। ফুটবলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো…আমি সেরা সব অ্যাথলেটে মুগ্ধ যারা নিজেদের পুরোটা দিয়ে আসে।
বার্সেলোনার সঙ্কট
আর্থিক দিক থেকে বার্সেলোনা কঠিন সময় পার করছে। ক্লাব খুব বাজে পরিস্থিতিতে আছে। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যাওয়া খুব কঠিন হবে।
মেসির কান্না
আমি খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত কিছুর জন্য কাঁদি না। তবে এটা আমাকে খুব ভোগায়। অন্য বিষয় আছে যেগুলোতে আমার চোখে জল আসে। আমি বিস্তারিত বলছি না। তবে খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ইস্যুগুলো আমাকে ভোগায়।
বার্সেলোনায় প্রথম আসা
সেটা ছিল কঠিন এক সময়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সব ছেড়ে এমন জায়গায় আসা যেখানে আমি কাউকে চিনি না।
এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক অভিজ্ঞতা যা আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আমি ছিলাম লাজুক, গুটিয়ে ছিলাম নিজের মাঝে। নিজের জন্য একটা খোল তৈরি করে রেখেছিলাম, যেটা ভেদ করে কিছুই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি কি চাই তা নিয়েই ভাবতাম, স্বপ্ন পূরণ নিয়ে ভাবতাম, অনুশীলন আর খেলায় মনোযোগী থাকতাম। ধীরে ধীরে কয়েকজন আমার বন্ধু হয়।
যে জীবন মেসির
আমার জীবন স্বাভাবিক। কখনও কখনও একঘেয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠি। নাস্তা করি এবং অনুশীলনে যাই। এরপর ঘরে ফিরি, আনতোনেল্লাকে নিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করি। ওদের সঙ্গে সময় কাটাই। যখন ফিরি ততক্ষণে রাত ৮টা বেজে যায়, রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় যাই।
চারপাশে কি ঘটছে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ। মানুষ ভাবে, আমরা একটা বলয়ে বাস করি এবং জানি না, কি ঘটছে। আমরা অনেক আয় করি এবং কোনো কিছুর পরোয়া করি না। এটা মিথ্যে। বাস্তবতা হলো অন্য সবার মতো আমরাও সব কিছু খেয়াল করি। কি ঘটছে সে ব্যাপারে খবর রাখি।
যেভাবে জীবন কাটাচ্ছি তাতে আমি সৌভাগ্যবান। কিন্তু কখনও কখনও মনে হয়, যদি সাধারণ কেউ হতাম মার্কেটে যেতে পারতাম, সিনেমা দেখতে যেতে পারতাম। আমি কি করছি না করছি দেখতে ৩০০ চোখ তাকিয়ে থাকতো না। যে ভালোবাসা পাই তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু এমন সময় আসে যখন চাই কেউ আমাকে লক্ষ্য না করুক।
বায়ার্নের বিপক্ষে হার
যেভাবে ম্যাচটা হয়েছে তাতে ৮-২ গোলের হার সবার জন্যই সবচেয়ে বাজে ফল। হারের দিক থেকে যেভাবে আমরা হেরেছি তাতে সেটা ছিল খুব কঠিন একটা সময়। আমরা খুব কঠিন একটি বছর কাটিয়েছি। আমরা হারতে পারি, কিন্তু এভাবে না।
মনোবিদের কাছে যাওয়া
আমার যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু কখনও যাইনি। এটা প্রয়োজন জানার পরও মনোবিদের কাছে যাওয়া আমার জন্য কঠিন। তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি এমন একজন যে নিজের ব্যাপারে সবকিছু জানে। প্রতি দিন আমি যা করি, যা আমার করতে হবে এর জন্য মনোবিদের কাছে আমার যাওয়া উচিত কিন্তু আমি যাই না, তার সঙ্গে শেয়ার করি না। করলে আমার জন্যই ভালো হতো, কিন্তু আমি করি না।”
ড্রেসিং রুমের রাজা মেসি
লম্বা সময় ধরে এটা বলা হচ্ছে। জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও এটা বলা হয় যে, আমি কোচ ঠিক করি এবং আমার বন্ধুদের খেলাই। অনেকে মনে করে এটাই সঠিক এর জন্য আমি বিরক্ত। সব কিছুই সংবাদপত্রে আসে এবং অনেকে মনে করে, আমি খেলোয়াড় ও কোচ ঠিক করি। দলে কে আসবে আমি ঠিক করি, এগুলোর কোনোটিই ঠিক নয়।
নেইমার ফিরবে?
নতুন খেলোয়াড় আনা খুব কঠিন হবে। কারণ, টাকা নেই। সব কিছুর জন্য লড়াই করতে হলে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে আনতে হবে। এর জন্য অর্থ খরচ করতে হবে। নেইমারকে ফেরানো অবশ্যই ব্যয়বহুল হবে।
তাকে আনতে হবে পিএসজি থেকে। ওদেরকে ট্রান্সফার ফি কীভাবে দেবে বার্সেলোনা? নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা হবে খুব কঠিন একটা পরিস্থিতি। তাকে হতে হবে স্মার্ট এবং তাকে সব কিছু শৃঙ্খলায় ফেরাতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে যেন সব কিছু ঠিকঠাক এগোয়।
বার্সেলোনা সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
ক্লাব আমাকে সব কিছু দিয়েছে এবং এই ধরনের কথা মানুষদের আমি বলতে শুনেছি। এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি এই ক্লাব, এই শহর ভালোবাসি। আম মনে করি, এই ক্লাবকে আমি আমার সবটুকু দিয়েছি। ক্লাব আমাকে যা দিয়েছে সেটা আমি অর্জন করেছি এবং তা আমার প্রাপ্য। একটা সময় এসেছিল যখন আমি ভেবেছি, একটা চক্র পূর্ণ করেছি, আমার একটা পরিবর্তন দরকার। এই সব ভাবনা থেকে আমার দূরে থাকা দরকার। আমি জানতাম যে, এই বছর হবে পরিবর্তনের বছর।
আমি সব সময় আরও শিরোপার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছি, আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগ শিরোপার জন্য লড়াই করার কথা ভেবেছি। আমার মনে হয়েছিল, পরিবর্তনের এটাই সময়। আমি বিদায় নিতে চেয়েছিলাম এবং সেটা ভালোভাবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ব্যাপারগুলো পরিষ্কার করেননি এবং সবকিছু দেখে মনে হয়েছে, আমিই বাজে লোক। তবে আমি শান্ত আছি।
এটা ছিল ভীষণ কঠিন একটা সিদ্ধান্ত…যা নেওয়া সহজ নয়। এখানে যে পর্যায়ের জীবন কাটাচ্ছি তার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো শহর আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার পরিবারও এখান থেকে যেতে চায় না। তবে আমার মনে হয়েছিল, আমার জন্য, ক্লাবের জন্য, সবার জন্যই এটা ভালো। আমার যাওয়া প্রয়োজন ছিল কারণ চক্র পূর্ণ হয়েছিল। এত কঠোর হওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
জানি না, আমি চলে যাব কি না। যদি যেতেই হয় সবচেয়ে ভালোভাবে যেতে চাইব। যদি যাই-ই, ভবিষ্যতে আবার আমি এই ক্লাবে ফিরতে চাইব এবং আরও ভালো হয়ে উঠতে অবদান রাখব। আমি সহ যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বার্সেলোনা অনেক বড়। আশা করি, নতুন যে প্রেসিডেন্ট আসবেন আবার শিরোপা জিততে তিনি সব ভালোভাবে করবেন।
শেষ পর্যন্ত থাকলে তা একটা সুন্দর গল্প হবে। এই শহর, এই ক্লাবের সঙ্গে এটা খুব কম বয়সে শুরু হওয়া একটা ভালোবাসার গল্প। এটা ভালোভাবেই শেষ হোক, এখানে আমি যা করেছি তাতে দাগ পড়ার কোনো দরকার নেই। সে সব আমরা পেরিয়ে এসেছি আমরা দেখব শেষে কি ঘটে।