ক্যাটাগরি

চরম আবহাওয়ায় এবছরও চড়া মূল্য দিয়েছে বিশ্ববাসী

এ বছরের বড় বড় কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে দতাব্য সংস্থা ‘খ্রিস্টান এইড’ এর তৈরি একটি প্রতিবেদনে সেই চিত্র উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এসব দুর্যোগের ছয়টিই ঘটেছে এশিয়া মহাদেশে। চীন এবং ভারতে বন্যায় চার হাজার কোটি ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এবছর রেকর্ড সংখ্যায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। সেইসঙ্গে দাবানলের কারণে দেশটিতে ক্ষয়ক্ষতির মোট আর্থিক পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

২০২০ সালের পুরোটা জুড়েই বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। তার মধ্যেই আরও লাখ লাখ মানুষকে বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গেও লড়তে হয়েছে।

দুর্যোগের খতিয়ান

এ বছর এশিয়া মহাদেশে বর্ষাকালে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। মূলত সমুদ্র থেকে ভূখণ্ডে উঠে আসা নানা ঘূর্ণিঝড় সঙ্গে করে প্রচুর মেঘ নিয়ে আসায় অস্বাভাবিক বৃষ্টি এবং তা থেকে বন্যা দেখা দিয়েছে।

কয়েক মাসের টানা বন্যায় ভারতে দুই হাজারের বেশি ‍মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। অর্থের হিসাবে যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক ‍হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এশিয়ার আরেক দেশ চীনেও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্যায় দেশটিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিন ‍হাজার দুইশ’ কোটি মার্কিন ডলার। তবে সেখানে প্রাণহানি ভারতের তুলনায় কম হয়েছে।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে। কিন্তু কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে যেটা মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে।

যেমন: বঙ্গোপসাগরে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মাত্র কয়েক দিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল।

‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলোজির’ জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. রক্সি ম্যাথু কল বলেন, ‘‘আমরা এবছর আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখতে পেয়েছি।

‘‘এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণেই সমুদ্রের তাপীয় তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে এবং অকালে আম্পান ও নিসর্গর মত ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর অন্যতম ছিল আম্পান।”

ইউরোপের দেশগুলোও এবছর ঝড়ে নাকাল হয়েছে। ফেব্রয়ারিতেই ঝড় কিয়ারার কবলে পড়ে আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ। এই ঝড়ে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ছাড়াও ২৭০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বছরের শেষে এসে যুক্তরাজ্য পড়েছে শক্তিশালী আরেক ঝড় বেলার কবলে। এই ঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টির কারণে এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে বহু এলাকা; বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, যান চলাচল বিঘ্নিত হয়ে লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

আফ্রিকাতেও হানা দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেখানে কয়েকটি দেশে বছরের শুরুর দিকে পঙ্গপাল হানা দেয়। বিশালাকৃতির ওই পঙ্গপালের ঝাঁক মাইলের পর মাইল ক্ষেতের ফসল খেয়ে শেষ করে দেয়। পঙ্গপালের কারণে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে আটশ কোটি মার্কিন ডলার।

মধ্যপ্রাচ্য এবং হর্ন অব আফ্রিকায় অসময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ওই পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। অন্যদিকে, দক্ষিণ সুদানে বন্যায় চরম আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৩৮ জন মানুষের প্রাণহানি হওয়া-সহ বন্যায় এবছরের ফসলও নষ্ট হয়েছে দেশটিতে।

গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকার কারণে সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া আরও চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়বে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও শক্তিশালী রূপ নিয়ে মানুষের উপর আঘাত হানবে।