সোমবার
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই নিলামের মাধ্যমে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে সরকার। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এই বন্ড ইস্যু
করছে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, দুজন ব্যক্তি এবং ৩৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ৩৯টি আবেদন জমা পড়ে নিলামে। চার হাজার কোটি টাকার বন্ডের জন্য মোট ১৫ হাজার ১৫৩
কোটি ১০ লাখ টাকার
বিডি দাখিল করা হয়। আনুপাতিক হারে সবাইকেই বন্ডের সার্টিফিকেট দেওয়া
হয়।
এই
বন্ডের বিপরীতে বছরে ৪ দশমিক ৬৯
শতাংশ হারে মুনাফা দেবে সরকার। মুনাফা বিতরণ করা হবে প্রতি ছয় মাস পর পর। শরিয়া
বন্ডে মুনাফার হার
নির্দিষ্ট।
সুকুক
একটি আরবি শব্দ, যার মাধ্যমে সিলমোহর দিয়ে কাউকে আইনি অধিকার দেওয়া বোঝায়। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’ নামেই পরিচিত।
প্রচলিত
বন্ড হল এক ধরনের ঋণ। তাতে ঋণের
বিপরীতে বিনিয়োগকারীকে সুদ দেওয়া হয়। তবে তা শরিয়াহসম্মত নয়।
শরিয়াহভিত্তিক
বন্ড সুকুককে বিবেচনা করা হয় বিনিয়োগ সনদ
হিসেবে, যার বিপরীতে সম্পদের মালিকানা
দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। বিনিয়োগের জন্য তারা নির্দিষ্ট হারে
মুনাফা পান।
বাংলাদেশ
ব্যাংক প্রথম যে সুকুক চালু করল, তা ছাড়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের’ সম্পদের বিপরীতে।
বিনিয়োগকারীদের
টাকায় গড়ে উঠবে এই প্রকল্প; সরকার
তা ভাড়া নেবে। এই ভাড়ার টাকা
থেকে মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। মেয়াদ শেষে পুরো প্রকল্প কিনে বিনিয়োগকারীদের মূল টাকা ফেরত দেবে সরকার। এভাবে এ বন্ডের কার্যক্রম
পরিচালিত হবে।
গত ৮ অক্টোবর সুকুক
ইস্যু ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত
নীতিমালায় অনুমোদন দেয় সরকার। ওই নীতিমালার চতুথ
অনুচ্ছেদে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে এই বন্ডের ‘স্পেশাল
পারপাস ভেহিকল’ বা এসপিভি এবং
ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছে মোট ৮ হাজার কোটি
টাকার সুকুকের সার্টিফিকেট বিক্রি করবে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্যের প্রায় ৪৫ শতাংশের বেশি
শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর
কাছে রয়েছে।
দেশের
চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়নের পথ সম্প্রসারণ ও
সুগম করার লক্ষ্যেই সুকুক চালু করা হয়েছে।
“সুকুক
ইস্যুর মাধ্যমে এই ধারার ব্যাংক
ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য একদিকে যেমন সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে স্বল্প খরচে ব্যবহার করতে পারবে, অন্যদিকে শরীয়াহভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের বিকল্প ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি আলোচ্য সুকুক তারা এসএলআর হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে।”
শরীয়াহভিত্তিক
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
পাশাপাশি কনভেনশনাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
এবং ব্যক্তি পর্যায়েও সুকুকে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে ।
সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আলোচ্য সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি নব দিগন্তের সূচনা
হল । সুকুক ইস্যু
সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে বিকল্প অর্থায়নের উৎসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নতুন গতিধারার সৃষ্টি করবে।”