বাদুর ও বানর থেকে ছড়ানো সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচআইভি,
ইবোলা ভাইরাসের পর চীনের উহানে বন্যপ্রাণির বাজার থেকেই নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বন বিভাগ ও বিশ্বব্যাপী
বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করা নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কস
চিড়িয়াখানাভিত্তিক সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) সোমবার রাজধানীর
হোটেল সেরিনাতে সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদকদের
নিয়ে বন্যপ্রাণি পাচার, ব্যবসা ও সংরক্ষণ বিষয়ে দিনব্যাপী এক
কর্মশালার আয়োজন করে।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান, গণশিক্ষা ও
সংরক্ষণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বন্যপ্রাণি ও তাদের বাসস্থান সংরক্ষণে
কাজ করে যাচ্ছে।
কর্মশালায় ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রাণি সংক্রমিত রোগ পশুপাখি ও মানবদেহের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। বন্যপ্রাণির ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে এরা মানুষের সংস্পর্শে চলে আসে এবং প্রাণি সংক্রমিত রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বন্যপ্রাণি মৃত হোক বা জীবিত, এদের না ধরলে বা ব্যবসা-বাণিজ্য না করলে
এরা সাধারণত রোগ ছড়ায় না। বরং মুক্তভাবে প্রকৃতিতে বিচরণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য
রক্ষা করে ও পৃথিবীকে সুস্থ রাখে।”
ডব্লিউসিএসের তথ্য মতে, জুনোটিক ডিজিজ বা প্রাণি সংক্রমিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং দুই লাখেরও বেশি
মানুষ মারা যায়।
২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বন্যপ্রাণি পাচার ও অপরাধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করে জাহাঙ্গীর আলম
বলেন, এই
আট বছরের মধ্যে ২০১২ সালে বন্যপ্রাণি পাচারের
সংখ্যা আইন প্রণয়নের এক বছর কিছুটা কমে এলেও ২০১৫ সালে বেড়ে যায়।
এরপর দুই বছর কিছুটা কম থাকলেও ২০১৮ সালে বন্যপ্রাণি পাচার আবারও বেড়ে যায়। সেই হার এখন কিছুটা কম হলেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তিনি জানান, এই আট বছরে বন্যপ্রাণির অবৈধ ব্যবসায় এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ, ৩৩.৮৩ শতাংশ। এরপর
খুলনা বিভাগ ৩১.৫২ শতাংশ, বরিশালে ৯.০৮ শতাংশ,
রাজশাহী বিভাগে ৭.৯২ শতাংশ ও
চট্টগ্রামে ৬.১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে বন্যপ্রাণি পাচার নিয়ে ২০১৮ সালে ডব্লিউসিএসের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ
হয়েছিল। তাতে উঠে এসেছিল, পাচার হওয়া বন্যপ্রাণির মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশ স্তন্যপায়ী, ৫ শতাংশ ছোট
স্তন্যপায়ী, ৩৫
শতাংশ সরীসৃপ, ২০
শতাংশ পাখি, ১ শতাংশ
হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছ।
বন্যপ্রাণী হত্যা, পাচারের তথ্য দিলে পুরস্কার
বাংলাদেশ বন বিভাগের শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের পরিচালক
জাহিদুল কবির বলেন,
“ট্রান্সবাউন্ডারি পাচার কিছুটা কমে এলেও কিন্তু থেমে নেই অনলাইন
ট্রেড। দূর দেশের সঙ্গে হয়ত এখন বাণিজ্য করার উপায়গুলো বন্ধ। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ
ভারতের সঙ্গে সীমান্তপথে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণি চোরাচালান যে কমেছে, তা বলা যাবে
না।”
প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমাদের দেশের
ফুসফুস কী? সুন্দরবন।
সুন্দরবনের সামগ্রিক ইকোসিস্টেম ঠিক রাখতে গেলে আমাদের বন্যপ্রাণি পাচার বন্ধ করতেই হবে।”
বৈধ উপায়ে বন্যপ্রাণির বাণিজ্য করতে গেলেও
দ্য কনভেনশন অন দি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ইনডেঞ্জারড স্পেসিসেস
অব ওয়াইল্ড লাইফ ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা-সাইটিসের অনুমোদন দরকার পড়ে। সাইটিসে স্বাক্ষরকারী
দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সে অনুমোদন দেবে বন বিভাগ। কিন্তু সেই সনদ নকল করেও এখন অবৈধ
উপায়ে ব্যবসা করছে অসাধু চক্র।
আমির হোসেন বলেন, “সম্প্রতি সাউথ আফ্রিকা এমন ছয়টি ঘটনা আমাদের নজরে এনেছে। সাইটিস সনদে জাল স্বাক্ষর করে বা কখনও সিল নকল
করেও তারা ব্যবসা করে চলেছে।”
প্রধান বন সংরক্ষক জানান, বন্যপ্রাণি
পাচার ও এ সংক্রান্ত অপরাধে বাংলাদেশ এখন ‘তৃতীয়
শীর্ষ অবস্থানে’।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘২০১৯ অ্যান্ড
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাফিকিং রিপোর্ট’- এ বন্যপ্রাণি পাচারের ট্রানজিট ও প্রধান উৎস
হিসেবে ২৮টি ফোকাস দেশের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের নামও এসেছে।
ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণি হত্যা, পাচার, চামড়া, হাড় বা দাঁত
সংগ্রহ বা পাচারের তথ্য দিলে চার থেকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার।