লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রেস্তোরাঁগুলো তাদের
দরজা খুলেছে সে অনেকদিন আগের কথা। রাজধানীর অনেক রেস্তোরাঁয় আজকাল উপচে পড়া ভিড় চোখে
পড়ে। অফিস পাড়ায় দুপুরের খাবার খেতে অসংখ্য কর্মজীবীকে প্রতিদিন রেস্তোরাঁয় যেতে হচ্ছে।
এই চিত্রগুলো অনেকাংশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক
হিসেবে তুলে ধরলেও করোনাভাইরাসের দাপট আজও প্রবল।
তাই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার ঝুঁকি কতটুকু
এবং সেটা কমানোর জন্য কী করা উচিত সেই বিষয়গুলো জানানো হল স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের
প্রতিবেদন অবলম্বনে।
ঘরের বাইরে ঝুঁকি কতটুকু?
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন
(সিডিসি)’র পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, করোনা আক্রান্ত একজন ব্যক্তি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার
আগে কোনো না কোনো রেস্তোরাঁয় গেছেন এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুন। অর্থাৎ ঘরের বাইরে
খেতে যাওয়া আজও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার করতে যাওয়া এবং
বিমান সফরের চাইতেও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঘরের বাইরে খাওয়া। মাস্ক, স্যানিটাইজার, সামাজিক
দূরত্ব সবকিছু সুষ্ঠুভাবে মেনে চলার পরও রেস্তোরাঁয় খাওয়ার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের
ঝুঁকি বেশি। সেজন্যই যেসব স্থানে এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা গেছে, সেসব স্থানের
রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করা হয়েছে।
রেস্তোরাঁয় খাওয়া থেকে যেভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়
কেনাকাটা কিংবা বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে
মাস্ক সবসময়ই মুখে রাখা সম্ভব। কিন্তু রেস্তোরাঁয় খেতে হলে আপনাকে মাস্ক খুলতেই হচ্ছে।
এখানেই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
রেস্তোরাঁয় কর্মীরা সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান
করলেও আপনার আশপাশে বসা অন্যান্য অতিথি যারা খাচ্ছেন তাদেরও মাস্ক খুলে রাখতে হচ্ছে।
আর রেস্তোরাঁয় বদ্ধ পরিবেশে আপনার ও অন্যান্য অতিথিদের মুখ নিঃসৃত ‘ড্রপলেট’ একে অপরকে
সংক্রমিত করতে পারে। পাশাপাশি এই ড্রপলেট লম্বা সময় বাতাসে ভেসে থাকবে, পড়বে টেবিল,
বাসন, মুখ মোছার টিস্যু ইত্যাদির ওপর যা থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে সহজেই।
উপসর্গ নেই এমন আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়েই দুশ্চিন্তা বেশি
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যে মানুষগুলোর
সুস্থ আছেন, কেনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না এমন ‘অ্যাসিম্টোম্যাটিক’ মানুষের সংখ্যা মোট
আক্রান্তের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, দাবি বিশেষজ্ঞদের। নিজেরা কোনো অস্বস্তিতে না থাকলেও
এই আক্রান্ত মানুষগুলোর মাধ্যমেই অনেকের মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। সামান্য
জোরে কথা বলা থেকেই এই মানুষগুলো একজন সুস্থ মানুষের মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে নিজের
অজান্তেই।
বিশেষজ্ঞরা আরও দাবি করেন, একজন করোনাভাইরাস
সংক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তির মাঝে ‘কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই থেকে তিন
দিন আগে ওই ব্যক্তির ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষমতা সবচাইতে বেশি দেখা গেছে। ডাক্তারি ভাষায়
একে তারা বলছেন ‘প্রি-সিম্টোম্যাটিক’। তাই ঘরের বাইরে গেলে আশপাশের প্রতিটি মানুষকেই
সম্ভাব্য সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
রেস্তোরাঁর আসন সংখ্যা
রেস্তোরাঁ আসন সংখ্যা এবং অতিথি যত বেশি,
সংক্রমণের আশঙ্কা ততই বেশি। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁর ‘ভেন্টিলেইশন’ বা আলো-বাতাস চলাচলের
ব্যবস্থা কেমন সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বদ্ধ রেস্তোরাঁয় বরাবরই
ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। বাতাসের প্রবাহ কম হলে ভাইরাস লম্বা সময় বাতাসে ভেসে
থাকতে পারে। আর আপনার নিজস্ব সচেতনতা হতে হবে শক্ত। স্বাস্থ্যবিধিকে অবহেলা করা ঝুঁকি
বাড়ার সবচাইতে বড় কারণ। আর ভিড় বেশি থাকলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠবে,
ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
‘ইনডোর সিটিং’ বনাম ‘আউটডোর সিটিং’
রেস্তোরাঁয় ‘আউটডোর সিটিং’য়ের ব্যবস্থা
থাকলে তা সবসময়ই কিছুটা বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। তবে ‘আউটডোর সিটিং’ নিলেও সামাজিক দূরত্ব
বজায় রাখার কথা ভুলে গেলে চলবে না। বাইরে বসলে বাতাসের প্রবাহের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি
সামান্য কমবে।
রেস্তোরাঁর বাসন, পাত্র, শৌচাগার, আসবাব
সবকিছুই সকল অতিথি ব্যবহার করেন। আর বাসন বাদে বাকি জিনিসগুলো প্রতিবার ব্যবহারের পর
জীবাণুমুক্ত করা হবে এমনটা ভেবে নেওয়াটা বোকামি হবে। তাই যথাসম্ভব এই ভাগাভাগি করে
নেওয়ার বিষয়গুলো সতর্ক থাকতে হবে। খাওয়ার সময় বাদে পুরো সময়টা মাস্ক পরিধান করা উচিত।
ঝুঁকি কমাতে করণীয়
ঝুঁকি যতই হোক না কেনো বাইরে খাওয়া পুরোপুরি
এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিজেকেই নিতে হবে।
– দরজার হাতল, চেয়ার, টেবিল, বিলের ‘ফোল্ডার’,
মেন্যু ইত্যাদি যে জিনিসগুলো অনেকবার স্পর্শ করা হয় সেগুলো যথাসম্ভব কম স্পর্শ করাই
ভালো।
– খাওয়ার সময় ছাড়া সবসময় মাস্ক পরে থাকতে
হবে।
– খাওয়া আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে
হবে।
– রেস্তোরাঁয় যাওয়া জন্য ভিড় কম থাকে
এমন সময় বেছে নিতে হবে। ভিড় বেশি দেখলে অন্য রেস্তোরাঁ বেছে নিন।
– ব্যবহারের আগে বাসন ও অন্যান্য তৈজসপত্র
নিজেই জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারেন।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় একান্তই নিরুপায় না
হলে রেস্তোরাঁয় না যাওয়া। নিজে সামান্যতম অসুস্থ বোধ করলেও ঘরেই থাকা উচিত। আর কোথাও
গিয়ে যদি মানসিক স্বস্তি না আসে তবে সেখান থেকে দ্রুত চলে আসাই ভালো। কারণ মনের শান্তির
বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে এই মহামারীর সময়ে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন
রেস্তোরাঁয় ভাইরাসের ঝুঁকি সামলানোর উপায়
করোনাভাইরাস: সদাই কিনতে সতর্কতা