বুধবার রাতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট হ্যালোর বর্ষসেরা প্রতিবেদকদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর অনেকের জন্য পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে এই ধরনের শিশু সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে।
“শিশু সাংবাদিকদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানটিও ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ শিশু সাংবাদিকদের উৎকর্ষ সাধনে এবং বিশেষ করে শিশু সাংবাদিকদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনুষ্ঠান এবং তাদের পুরস্কৃত করার যে প্রয়াস, সেটি সত্যি প্রশংসনীয়।”
শিশুদের নিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট হ্যালোর (https://hello.bdnews24.com/) যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।
সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
যার বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি, যে লিখতে পারে, শিশুদের কথা সবাইকে বলার আগ্রহ যার আছে, সেই যুক্ত হতে পারে হ্যালোর শিশু সাংবাদিকের দলে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি শিশুদের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে, সতর্ক করলেন তথ্যমন্ত্রী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি থেকে শিশুদের বের করে আনতে শিশু সাংবাদিকতা দারুণ কাজে দেবে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচণ্ড আসক্তি বা এর সর্বনাশী থাবা শিশু-কিশোরদের বেড়ে উঠার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ত আমাদের জন্য কিছু সুযোগ বয়ে আনে। কিন্তু শিশু-কিশোরদের এই অতিরিক্ত আসক্তি তাদের স্বাভাবিক বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা।
“শিশু-কিশোররা আগের মতো বই পড়ে না, তারা লেখালেখি করে না। সেটি থেকে তাদের বের করে এনে সাংবাদিকতা শেখানো, এটাকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
তামাকবিরোধী পুরস্কার পেল হ্যালোর ইভান
বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিশুদের আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বানও জানান হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “শিশুদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ, মূল্যবোধ ও মেধার সমন্বয় থাকতে হবে। আমি বিডিনিউজকে অনুরোধ জানাব, শিশু সাংবাদিকদের লেখাতেও সেসব বোধের সমন্বয় যেন থাকে। তাহলে তারা তাদের সহপাঠী ও খেলার সাথীদের জন্য ও পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রাখতে পারবে।”
শিশু সাংবাদিকদের বাবা-মায়ের কথা স্মরণ করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেন।
“আমি তোমাদের বলব, তোমরা শুধু নিজের জন্যই স্বপ্ন দেখবে না, তোমরা স্বপ্ন দেখবে দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য। তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তোমাদের মধ্য থেকে একজন বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো কেউ বেরিয়ে আসুক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী বেরিয়ে আসবে, এটি আমার প্রত্যাশা।”
হ্যালো শিশু, তুমি সাংবাদিক হতে চাও?
“এরা সেরা নয়, সেরাদের সেরা”, বলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী
অনুষ্ঠানে বছর সেরা শিশু সাংবাদিকদের নাম ঘোষণার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “অত্যন্ত ভালো কাজ কর তোমরা। তোমাদের নিয়ে আমরা অনেক গর্ব করি। এজন্য গর্ব করি যে তোমরা আমাদের চেয়ে ভালো কাজ কর। তোমরা লিখেছো, সে কারণে অনেক বড় পরিবর্তন হয়েছে, নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে, পলিসি লেভেলে পরিবর্তন হয়েছে।”
হ্যালোর শিশু সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা কীভাবে একটি স্কুলের মাঠ দখল করে নিয়েছিলেন কিংবা প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্কুলে গরহাজির হলেই শত টাকা জরিমানা গুণতে হত হতদরিদ্র অভিভাবকদের। পরে সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তা সমাধান করে।
হ্যালোতে সংবাদ প্রকাশের পর ডাস্টবিন নির্মাণ
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “গত আট নয় বছরে হাজার হাজার শিশু সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি আমরা। তারা দুঃসাধ্য সাধন করেছে। তাই এরা সেরা নয়, সেরাদের সেরা।”
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে লেখক- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমাদের সময়ে তো আমরা সাংবাদিকতা করার কথা চিন্তাও করতে পারি নাই। কত ছাপা পত্রিকা! কে আমাদের লেখা ছাপাবে। অথচ আজকে তোমরা লেখালেখি করতে পারছ, ভিডিও ক্লিপ জমা দিতে পারছ। তোমরা অসাধারণ সুযোগ পেয়েছো।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল হ্যালোর শিশুদের বললেন, ‘এই ট্রেইনিং’ সারা জীবন তাদের কাজে লাগবে।
“তোমরা এই সুযোগ ব্যবহার কর, গ্রহণ কর। এই অসাধারণ ট্রেইনিং সারা জীবন তোমাদের কাজে লাগবে। তোমরা অবজেকটিভলি একটা জিনিস দেখতে পারবে, বিশ্লেষণ করতে পারবে, গুছিয়ে কোনো একটা কিছু লিখতে পারবে। খুব সুন্দর করে নিজেকে এক্সপ্রেস করতে পারবে। এটা কত বড় একটা সুযোগ।”
শিশু সাংবাদিকতায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর’, যারা ম্যানেজ করেছেন এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। কিন্তু বড় একটা পরিকল্পনা। তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা আমার খুবই প্রিয়। আমি সারা দিনে কতবার যে গিয়ে দেখি, আজকে নতুন কিছু হয়েছে কি না, বলে শেষ করতে পারব না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা সুন্দর একটা নিউজ পোর্টাল রাখার কারণে আমি সবকিছু দেখতে পারছি।”
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে শিশুদের উৎসাহ দিতে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ও হ্যালোর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সম্পাদক সুলাইমান নিলয়।
এ বছর হ্যালোর শিশু সাংবাদিকতা পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ জন।
প্রথম হয়েছেন যৌথভাবে ঢাকার রাফসান নিঝুম, গার্গী তনুশ্রী পাল, বাগেরহাটের নূশরাত ইসলাম তৃষা, টাঙ্গাইলের শেখ নাসির উদ্দিন, ফেনীর মাহবুবা তাবাসসুম ইমা।
দ্বিতীয় হয়েছেন যৌথভাবে রাজশাহীর আশিকুজ্জামান আশিক ও শরিফুজ্জামান বাপ্পী, ঢাকার আজমল তানজিম সাকির, খাদিজাতুল কোবরা রাফা, লক্ষ্মীপুরের মো.মামুন।
তৃতীয় হয়েছেন যৌথভাবে ঢাকার রূপকথা রহমান, রংপুরের গ্রেস সিলভিয়া রাণী তির্কী, খুলনার তাসনুভা মেহজাবিন, সিরাজগঞ্জের দ্বীন মোহাম্মদ সাব্বির ও নিবিড় সাহা।
হ্যালোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম স্থান অধিকারী শিশু সাংবাদিকরা ১৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় অধিকারী শিশু সাংবাদিকরা ১০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় অধিকারী শিশু সাংবাদিকরা ৫ হাজার টাকা পুরস্কার পাবে। সঙ্গে সনদ তো থাকছেই।