দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের
আরেকটি দলকে নোয়াখালীর ওই দ্বীপে নেওয়ার পর বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে
এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়,
“আমরা বার বার বলে আসছি, সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই। এ
কারণে বাংলাদেশের উপর অযৌক্তিক ও অন্যায্য চাপ প্রয়োগ না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক
এনজিও, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে
প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে ভয়ানক মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে, তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ
করা।
“জাতিসংঘের উচিত মিয়ানমারে
থাকা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সেখানে প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য
একটি কারিগরি ও সুরক্ষা দল পাঠানো।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম
থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে চড়ে এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রওনা হন নোয়াখালীর ভাসানচরের
পথে। দুপুরে তারা সেখানে পৌঁছান।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে
২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো
তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ
ও উখিয়ায় থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ হাজার ৬৪২ জনকে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ভাসানচরে
নেওয়া হয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই স্থানান্তরের বিরোধিতা করে আসছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর
উদ্বেগের পাল্টায় বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার পুনরায় গুরুত্বারোপ
করছে যে, ভাসানচর সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং বসবাসের উপযোগী। ৩০ বছর বয়সী এই দ্বীপে স্বাস্থ্যসেবা,
পানি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে।”
ইতোমধ্যে ভাসানচরের
সঙ্গে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সি-ট্রাক চালুর কথাও বলা হয় ওই
বিবৃতিতে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের
সহায়তা কার্যক্রমে নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃবিতে আরও বলা হয়,
“বাংলাদেশ সরকার এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত
করছে এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ বিষয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বলেছে, “যদিও ভাসানচরকে কেন্দ্র করে এবং স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বানোয়াট ও ভুল তথ্য
ছড়ানোর কারণে হতাশ সরকার। এটা মনোবেদনার যে, বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত
না জানিয়ে একটি অংশ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব
তৈরি করছে।”
বাংলাদেশ সরকার বলছে,
“এটা মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশ কেবলমাত্র মানবিক দিক
বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে কার্যক্রমই
নেওয়া হোক, তা পুরোপুরি অস্থায়ী।
“রোহিঙ্গারা তাদের
দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় এবং সবার উচিত হবে সেদিকে লক্ষ্য করে কার্যকর পদক্ষেপ
নেওয়া। মিয়ানমারের নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন আমরা সেদেশের সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের দৃশ্যমান সম্পৃক্ততার অপেক্ষায় আছি, যাতে এই বাস্তুচ্যুত ও নির্যাতিত মিয়ানমারের
নাগরিকরা জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুত তাদের স্বদেশে ফিরতে পারে।”