পুরো মহামারীর সময় জুড়ে শিশুদের ওপর করোনাভাইরাসের
প্রকোপ বরাবরই ছিল কম। তবে যে কয়জন আক্রান্ত হয়েছে তাদের এবং পুরো পরিবারের লড়াইটা
হয়ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর চাইতেও কঠিন।
কিছু গবেষণা আবার দাবি করছে, করোনাভাইরাসের
নতুন যে ধরন সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার হয়েছে তা শিশুদের জন্য অনেক বেশিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।
একারণেই মানুষকে সচেতন করার স্বার্থে
এখন পর্যন্ত শিশুদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে উপসর্গগুলো প্রায়শই দেখা গেছে সেগুলো
তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সে বিষয়ে বিস্তারিত।
শিশুদের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা কম: অনেকক্ষেত্রেই শিশুদের কোভিড-১৯’য়ের ধরনটা প্রাপ্তবয়স্কদের
থেকে ভিন্ন। তাদের মাঝে রোগটির একটি মৃদুমাত্রার ধরন চোখে পড়ে। উপসর্গগুলো দেখা যায়
দেরিতে। অপরদিকে তাদের শরীরে যে ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয় সেটাও হয় দুর্বল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায় এক তৃতীয়াংশ
‘পেডিয়াট্রিক কোভিড-১৯’ রোগীই ছিল ‘অ্যাসিম্টোম্যাটিক’ বা উপসর্গহীন। তবে যে উপসর্গগুলো
দেখা গেছে তাদের মধ্যে কিছু আবার প্রাপ্তবয়ষ্ক রোগীদের থেকে ভিন্ন। অপরদিকে শিশুরা
এই ভাইরাস ছড়ায় দীর্ঘ সময়ব্যাপি। তাই শিশু এবং নিজের সুরক্ষা দুটোই নিশ্চিত করতে শিশুদের
বেশি সুরক্ষিত রাখতে হবে।
শিশুদের মাঝে যেসব উপসর্গ দেখা গেছে
কফ: প্রাপ্তবয়স্কদের
মতো শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ‘ড্রাই
কফ’, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। মৃদু জ্বর দেখা দিলে তার করোনা পজিটিভ হওয়ার
আশঙ্কা প্রবল। ‘কফ’ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও একটি সাধারণ উপসর্গ। প্রায় ৭৫ থেকে ৮০
শতাংশ ‘কোভিড-১৯’ রোগীর মাঝেই মৃদু থেকে তীব্র বিভিন্ন মাত্রার ‘কফ’ দেখা গেছে।
নাক দিয়ে পানি আসা: এই উপসর্গটি শুধু করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। মৌসুমি সর্দির সঙ্গে
ইনফ্লুয়েঞ্জা’য়ের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়া শিশুদের মাঝে বেশিরভাগেরই করোনা টেস্ট
ছিল নেগেটিভ। তবে গলা আটকে থাকার পাশাপাশি যদি নাক দিয়ে পানি আসা শুরু হয় তবে ‘কোভিড-১৯’য়ে
সন্দেহটা অবান্তর হবে না। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যান্য উপসর্গ দেখা
যায় কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ত্বকের ফুসকুড়ি: মহামারীর শুরুর দিকে এই উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। ত্বকের বিভিন্ন অংশে অপ্রত্যাশিত
র্যাশ, ত্বকের ক্ষুদ্র রক্তনালীতে সংক্রমণ, হাত কিংবা পায়ের আঙ্গুল ফুলে যাওয়া ইত্যাদি
বিপদজনক ইঙ্গিত। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে দ্রুত।
মাথা ব্যথা:
সংক্রমণের কারণে ব্যথা হওয়ার উপসর্গটা শিশুদের মাঝে দেখা গেছে কম। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে
মাথা-ব্যথা দেখা গেছে বেশি, যা বেশ অসহ্য হতে পারে। প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে প্রায়
১৪ শতাংশের মাঝে মাথা ব্যথা দেখা গেছে, তবে শিশুদের মাঝে সেই মাত্রাটা হল ৫৫ শতাংশ।
আর এদের মধ্যে সবারই করোনা টেস্ট আসে ‘পজিটিভ’।
স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো: একাধিক গবেষণার দাবি, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের
কারণে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানোর সম্ভাবনা শিশুদের ক্ষেত্রে সাতগুন বেশি। এর কারণে
শিশুরা খাওয়ার রুচি হারাবে, অবসাদগ্রস্ত থাকবে, শারীরিক দুর্বলতা বাড়বে। আর এগুলো সবই
সংক্রমণের সম্ভাব্য উপসর্গ।
পেটের গোলমাল:
ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি ভাব, খেতে না চাওয়া ইত্যাদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ
হতে পারে। যদিও এই সমস্যাগুলো প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তীব্রমাত্রায় করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত হলে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃদু সংক্রমণেই এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন
করোনাভাইরাস: শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
করোনাভাইরাস: শিশুদের উপসর্গ কম