বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির সমাপনীতে বছর শেষে যে পুরস্কারটি দেওয়া হয়, তাতে অতিথি হিসেবে থাকতে পারা তার ওই আক্ষেপ ঘুচিয়েছে।
শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিকদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শেষে তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলাপচারিতায় সেই কথা বলেন জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের জীবন দিয়ে বলতে পারি, আমি আমার সারা জীবনে কোনো পুরস্কার পাই নাই। যখন আমি ছোট ছিলাম সব জায়গায় পার্টিসিপেট করেছি। কবিতা আবৃত্তি করার সময় ভুল উচ্চারণে আবৃত্তি করেছি। দৌড়ানোর সময় দৌড়িয়েছি মাঠে গিয়ে, বড় বড় রচনা লিখেছি। কখনও কোনো পুরস্কার পাই নাই। তখন যারা পুরস্কার পেয়েছে, তাদেরকে খুবই হিংসা করেছি।
“কাজেই আজকে যারা পুরস্কার পাওনি, জানবে আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। পুরস্কার না পাওয়ায় খুব ক্ষতি হয়নি। আজকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যে পুরস্কার বিতরণী হয়, তাতে আমি পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। পুরস্কার পাওয়ার থেকে দেওয়ার মধ্যে আনন্দ। আমি যে আনন্দ পেয়েছি, একদিন তোমরাও সে আনন্দ পাবে।”
শিশু সাংবাদিকতায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পথপ্রদর্শক: তথ্যমন্ত্রী
শিশু সাংবাদিককরা তাদের পছন্দের লেখককে পেয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতেই নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন। কারও প্রশ্ন ছিল লেখালেখি নিয়ে, কারও প্রশ্ন ছিল প্রযুক্তি নিয়ে, কারও প্রশ্ন ছিল সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে।
বই লিখতে গেলে কী করতে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, লেখালেখিতে উন্নতির করতে গেলে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। ভালো লিখতে গেলে বেশ পড়তে হবে।
“লেখালেখি খুব পরিশ্রমের ব্যাপার। কোনো শর্টকার্ট নেই। একটা রাতে বসে কালজয়ী কিছু একটা লিখে ফেলব, সেটা কিন্তু হবে না। তোমাকে যদি লিখতে হয়, তাহলে খুব পরিশ্রম করতে হবে। কাজে তুমি যদি ভালো লিখতে চাও, সুন্দর করে লিখতে চাও তাহলে তোমাকে অনেক বই পড়তে হবে।
“তুমি যদি মনে করো, আমার বই পড়ার সময় নাই, আমি লিখেই আমার জীবন কাটাব, তাহলে কিন্তু হবে না। যে যত বেশি বই পড়ে, সে তত বেশি সুন্দর লিখতে পারে। তুমি যদি অনেক অনেক বই পড়, তাহলে দেখবে তোমার লেখার স্ট্যান্ডার্ড কত ভালো হয়ে গেছে। অনেক বই পড়ার পর ব্রেইনের ভেতরে চেঞ্জ হয়। তুমি যদি বই পড়, তাহলে তুমি সুন্দর বই লিখতে পারবে।”
কোন সায়েন্স ফিকশন বা উপন্যাস লিখতে জাফর ইকবাল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলেন, শিশুরা সে প্রশ্নটি করলে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘রাশা’র কথা।
পাঠ্যসূচির বাইরে এসে যে শিশুরা সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ড বা সাংবাদিকতার মতো কাজে যুক্ত হয়েছে তাদের স্বাগত জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, “স্কুলে লেখাপড়ার বই ,পাঠ্যবই পড়বেই। বাইরে অবশ্যই কিছু করতে হবে। নাইলে সত্যিকারে মানুষ হবে না। যার যেটা আগ্রহ যার যেটা উৎসাহ, সে সেটাই করবে।”
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
জাফর ইকবাল যদি শিশু হতেন, তবে মহামারীকালে তিনি কী করতেন- এমন প্রশ্ন করে এক শিশু সাংবাদিক।
হাসিমুখে জাফর ইকবাল এক মুহূর্ত না ভেবে বলেন, “আমি পাগল হয়ে যেতাম। যখন শিশু ছিলাম, বাবার চাকরি সুবাদে রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, বগুড়া নানা জায়গায় জঙ্গলে-নদীতে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার তো ল্যাপটপের সামনে সারাক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস নেই।
“তবে এখন তো মেনে নিতেই হবে অবস্থাটা। (শিশু হলে) অনেক বই পড়তাম। যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং না জানি, তাহলে আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিংটা শিখে নিতাম। ছবি আঁকার শখ থাকলে ছবি আঁকতাম। তবে এই যে স্ক্রিন আছে, আমি এই স্ক্রিনের সামনে বসতাম না।”
শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, “এটা কঠিন ব্যাপার। এ থেকে চট করে উদ্ধার পাব, সেরকম না। সিস্টেমেটিকালি চিন্তা করতে হবে।
“এটার সমাধান করতে হলে চিন্তা করতে হবে। যেসব দেশে এ ধর্ষণ ব্যাপারটা নাই, তারা কেমন করে করল, সেটা কেমন করে করল তারা সেটা জানতে হবে। একটা বড় প্রজেক্ট নিয়ে আগাতে হবে।”
এক শিশু সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, “আমার যদি সুপার পাওয়ার থাকত, তাহলে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যে বিভাজন, সেটা আমি দূর করে দিতাম। মেয়েরা যেন সমান সুযোগ পায় সব জায়গায়। আমি মনে করি, এটা আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সারাক্ষণ ঘরবন্দি হয়েই থাকতে হচ্ছে জাফর ইকবালকে। বই পড়া ও লেখালেখি করেই কাটছে তার সময়।
তবে শিশুদের সঙ্গ তিনি উপভোগ করেন জানিয়ে বলেন, “আমার হয়ত বয়স বাড়ে নাই। তোমাদের বয়সের বাচ্চাদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টার দিনের পর দিন বসে কথা বলতে পারব। সেটা তো হয় না। ঘুরেফিরে আমাকে বড় মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তখন খুবই বোর লাগে।
“আমরা লকডাউনের সময় বই পড়তে পারি, লেখালেখি করতে পারি। আমি আশা করি, এক দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আবার ঘর থেকে বের হতে পারব।”