আজ হোক-কাল হোক সরকারের পতন নিশ্চিত করার মানসিকতা নিয়ে রাজপথে নামলেই সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ডিআরইউয়ে বিএনপি সমর্থিত একটি সংগঠনের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আন্দোলনের সঙ্গীদের উদ্দেশে মান্না বলেন, “আপনারা একজন মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবেন, দুইজন মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবেন- তা দিয়ে কিছু হবে না। বলেন এই সরকারকে চাই না, এই সরকারকে চলে যেতে হবে। পারলে কালকে বিদায় করব, যদি কালকেই না পারি পরশু দিন করব, না যদি পারি এক মাস পরে করব, এক বছর পরে করব। লড়াই তার বিরুদ্ধে, এই সরকারকে কোনো দিনও মানব না।
“আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদের সাথে কৌশলে আর ওই শব্দটা আমার পছন্দ- ‘পুতু পুতু’ করে আন্দোলন করতে পারবেন না। বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। সেই রাজপথে নামার আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।”
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমার আহ্বান কি আপনারা শুনবেন? শুনবেন না। কারণ দলের তো আহ্বান লাগবে। দলের কথা মতো যদি না যান তাহলে অসুবিধা হবে। কিন্তু আমি আপনাদের বলি, বাংলাদেশ বাদ দেন। সাম্প্রতিককালে আমেরিকাতে এত বড় আন্দোলন হয়েছে- কোনো দল আহ্বান জানিয়েছিল? সমগ্র ইউরোপজুড়ে যে মিছিলের পর মিছিলে লাখো লোকের মিছিল হয়েছে- ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস-কোনো দল আহ্বান জানিয়েছিল?
“তাহরির স্কয়ারে এত বড় বিপ্লব যার কারণে হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসনামলের অবসান হল- কোনো রাজনৈতিক দল আহ্বান জানিয়েছিল? না, তিউনিসিয়াতে যে অভ্যুত্থান হয়েছে, বেন আলীর পতন হয়েছে ৩২ বছর পরে- কোনো রাজনৈতিক দল আহ্বান জানিয়েছিল? না। একজন ফল বিক্রেতা ওই সরকারের ওপরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিল তার প্রতিবাদে আন্দোলন।
“যদি এই আন্দোলন না করেন বাংলাদেশের ১০ কোটি ভোটার আগামীতেও ভোট দিতে পারবেন না। যতই স্থানীয় সরকার অন্যান্য নির্বাচনগুলো করেন শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে আবার নতুন কোনো কায়দা করবে যদি ওরা ক্ষমতায় থাকে।”
সে কারণে যে কোনো মূল্যে এই সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে মাঠে নামার পরামর্শ দিয়ে মান্না বলেন, “কারণ এটা বৈধ সরকার নয়, নির্বাচিত সরকার নয়। ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই। অতত্রব তাকে যেতে হবে। ৫ জানুয়ারিতে এটাই হোক আমাদের শপথ। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন সবাই মিলে আমরা গড়ে তুলতে পারব- এই প্রত্যাশা হোক আমাদের।”
‘টিকা নিয়ে ব্যবসা হচ্ছে’
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে একপক্ষ পকেট ভারী করার পায়তারা করছে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে শুরু হয়নি। হবে, কবে? এ রকম একজন আজব চিজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি থাকে তাহলে ভ্যাকসিন আসবে? একজন বলছে, আমরা সরকারি দলের এমপির সাথে চুক্তি করেছি। তারই দলের এমপি, তার বাবা আবার রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি বলছেন, না। সরকারের সাথে কোনো সরকারের চুক্তি হয়নি। প্রাইভেট কোম্পানির সাথে প্রাইভেট কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছি।
“পত্রিকায় আছে, ভারত দুই ডলারে টিকা পাচ্ছে। আমাদের এখানে কত দাম হবে? ৫ ডলার। এই ৩ ডলার কোথায় যাবে বলেন তো? এই ডলার যাবে দরবেশদের কাছে। চোর এরা। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে খেলে, একেবারে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে একটা মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তার সাথে রসিকতা করে।এরা মানুষের পর্যায়ে নাই এখন। ক্ষমতার লোভে অর্থের লালসায় ওরা অমানুষ এখন।”
যে টাকা দিয়ে টিকা কেনা হচ্ছে, সেই টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ এনে দেশেই টিকা তৈরি করা যেত বলে মন্তব্য করেন মান্না।
এ প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই কথা স্পষ্ট করে বলা যায়, এই সরকারের হাতে মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। এই সরকারের হাতে ঔষধ নিরাপদ নয়, এই সরকারের হাতের নারীর সম্ভ্রম নিরাপদ নয়, এই সরকারের কাছে মানুষ কথা বলবার অধিকার পাবে না।
“এখন আপনি বলছেন, এই যে এগুলো পারছেন তার প্রতিবাদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আচ্ছা বাণিজ্যমন্ত্রীর যদি পদত্যাগ চান তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকবে ক্ষমতায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর যদি পদত্যাগ চান তাহলে আইনমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবে। প্রধান বিচারপতিকে ঘাড় ধরে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। আজকের পত্রিকায় আছে, বরিশালের একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি। তার খবর নাই। আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশের কাছে জিডি করতে গেছে সেই জিডি পর্যন্ত নেয় না। এই পুলিশ গত ৬ বছরে ১৮০০ মানুষকে হত্যা করেছে-এটা সময় টিভি লিখেছে।”
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের উদ্যোগে ‘৫ জানুয়ারি ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র নির্বাসনের জঘণ্য অধ্যায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সহ-সভাপতি আল আমীন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির মিয়া মো. আনোয়ার, রকিবুল ইসলাম রিপন, তাঁতি দলের কাজী মনিরুজ্জামান মুনির, মহানগর বিএনপি দক্ষিণের ইসমাইল তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।