ক্যাটাগরি

‘নিহত’ কিশোরীর ফেরা: বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন হাই কোর্টে

সেখানে বলা হয়, আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি।

শিশির মনির পরে সাংবাদিকদের বলেন, “স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধকরণ সংক্রান্ত ৬ দফা সুপারিশ আজ আদালতে লিখিতভাবে তুলে ধরেছি।

“সেখানে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পাশাপাশি ফরিদপুরে ৩ ঘণ্টায় পরপর ৩ আসামির স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করা ও চট্টগ্রামের এক মামলায় ২ আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বীকারোক্তি সংক্রান্ত ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতের ১৪টি মামলা এবং আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় তিন আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় গত বছরের ৯ আগস্ট তারা জবানবন্দি দেয়।

এদিকে অপহরণের ৪৯ দিন পর গত বছরের ২৩ আগস্ট সেই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। কিশোরী বিয়ে করে সংসার করছে বলে জানায় পুলিশ।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন একই বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত লিখিত আবেদন করতে বলে।

এর পরই ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী রিভিশন মামলার আবেদন করেন।

এই কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় তার বাবার করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, অপহরণ মামলাটির  শুদ্ধতা, বৈধতা এবং যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় আবেদনে।

এছাড়াও আবেদনে অপহরণ মামলার নথি তলবের আরজি জানানো হয়।

আদালত এ মামলার শুনানি নিয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট হাই কোর্ট অপহরণ মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে।

মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শামীম আল মামুনকে ১৭ সেপ্টেম্বর লিখিত ব্যাখ্যাসহ হাজির হতে বলা হয়।

আর তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দায়িত্ব পাওয়া নতুন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে বলা হয় মামলার সিডি (কেস ডকেট) নিয়ে হাজির থাকতে।

সে অনুযায়ী গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর দুই তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন।

শুনানির পর ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারিক অনুসন্ধানের আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

সেদিন আদালত আদেশে বলে, তদন্তকারী কর্মকর্তার লিখিত ব্যাখ্যা এবং সিডি (কেস ডকেট) পর্যালোচনায় আমাদের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, আসামেীদের গ্রেপ্তার, রিমান্ড, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড এবং কথিত ধর্ষণের শিকার ও নিহত ভিকটিম জীবীত থাকাসহ সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধার প্রয়োজন।

অতএব, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারায়ণগঞ্জকে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের প্রক্রিয়া, রিমান্ড, ভিকটিমকে অবস্থায় পাওয়ার বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রদান করা হল।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় এজাহারকারী, কথিত ভিকটিম, জবানবন্দি প্রদানকারী আসামী, তদন্তকারী কর্মকর্তা, জবানবন্দি রেকর্ডকারী, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এবং গ্রেপ্তাকৃত আসামিদের পরিবারবর্গসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হল। সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের কেউ আইনজীবীর সহায়তা গ্রহণে আগ্রহী হলে বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করতে পারবেন।

সে প্রতিবেদনই সোমবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা পড়ার পর মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

বিচারিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস ‘মতামত’ অংশে বলেছেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আসামিদের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর, ১৬৪ ধারা অনুযায়ী আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগণের কোনো অনিয়ম অনুসন্ধানকালে প্রতীয়মান হয় নাই।

তবে পুলিশ হেফাজতে (পুলিশ রিমান্ড) থাকাকালীন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ থমডেল থানার উপপরিদর্শক (এস আই)  মো. শামীম আল- মামুনের বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।’

প্রতিবেদনটির ওপর শুনানির পর আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।