ক্যাটাগরি

ওবায়দুল কাদের ভালো মানুষ: মান্না

মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায়
ডিআরইউয়ে বিএনপি সমর্থিত একটি সংগঠনের আয়োজনে ‘৫ জানুয়ারি ভোটাধিকার হরণ ও গণতন্ত্র
নির্বাসনের জঘন্য অধ্যায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে এক সময়ের ছাত্র রাজনীতির
প্রতিদ্বন্দ্বী কাদেরের প্রশংসা করলেন তিনি।

দুই দিন আগে নোয়াখালীতে
বসুরহাট পৌরসভায় সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার
বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে নিয়েও নিজের অভিমত জানান বিএনপির
জোটসঙ্গী দলের নেতা মান্না। ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকার এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের
মেয়র প্রার্থী হয়েছেন আবদুল কাদের। কিন্তু ভাবিসহ দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে
কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না
বলেন, “ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কী কী বলেছেন সেগুলো আজকের পত্রিকায় আছে। তাকে সাংবাদিকরা
জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনি আপনার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন কেন? তিনি (ছোট ভাই) খুবই
শান্তভাবে বলেছেন, আমি আমার ভাইয়ের বিরোধিতা করছি না। ওবায়দুল কাদের সাহেবের বিরোধিতার
জন্য আমি কথা বলিনি।

“আমি নিজেও বলি, আপনারা
অনেকে জানেন, ওবায়দুল কাদের দুই বার ডাকসুতে আমার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করেছিলেন। ফলাফলের কথায় আসছে না। কিন্তু উনি একজন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, ভালো
মানুষ ছিলেন। এখন পর্যন্ত তার নামে বিরাট লুটপাট-দুর্নীতির কথা নাই।”

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
ওবায়দুল কাদের ১৯৭৯-৮০ এবং ১৯৮০-৮১ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
(ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করে হেরে যান। প্রথম দফায় জাসদের প্যানেলের
নেতৃত্বে থাকা মান্নার কাছে পরাজিত হন আওয়ামী ছাত্রলীগের নেতা কাদের। পরের বছর জাসদ
ভেঙে বাসদ গঠিত হলে মান্না বাসদ ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচন করে কাদেরকে হারিয়ে আবারও ভিপি
নির্বাচিত হন।

ছাত্র রাজনীতি থেকে
বিদায় নেওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মান্না। ২০০২ সালে সাংগঠনিক সম্পাদকের
দায়িত্ব পান তিনি। সে সময় ওবায়দুল কাদের ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

তবে সেনা নিয়ন্ত্রিত
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের পদ হারানো
মান্না নাগরিক ঐক্য গড়ে সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে
বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ধানের শীষ নিয়ে বগুড়ার একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে
গেছেন তিনি।

কয়েক বছর ধরেই বিএনপির
অনেক নেতার তুলনায় সরকারের সমালোচনায় বেশি উচ্চকণ্ঠ মান্না। এরমধ্যে ২০১৫ সালে বিএনপি
নেতা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার টেলিফোন আলাপের
দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়, যেখানে তার কণ্ঠে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা হস্তক্ষেপের
উদ্যোগে আগ্রহের সুর শোনা যায়।

ওই কথোপকথনের মধ্যে
বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ ফেলার’ কথাও বলতে শোনা
যায় তাকে।

এ ঘটনায় সেনা বিদ্রোহে
উসকানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মান্নাকে গ্রেপ্তার করা
হয়। ২১ মাস পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্ত হয়ে মান্না হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে
তাকে দেখতে গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।

সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে
বিক্ষোভে ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,
“ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ভীষণ অসুস্থ হয়েছিলেন। গেছেন নিউ ইয়র্কে চিকিৎসা করতে। জীবন-মৃত্যুর
সাথে লড়াই করতে করতে উনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি স্থির করেছি যদি আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে
দেন, আমি যদি বাঁচি দেশে ফিরে গেলে সত্য কথা বলব। এই সত্য কথা আমি বলেছি।

“সত্য কথা এই সরকারের
কানের মধ্যে ঢুকবে? যদি না ঢুকে তাহলে কানের মধ্যে বাতাস দেবার ব্যবস্থা করেন।”