ক্যাটাগরি

এই টিকা হালাল তো? অপেক্ষায় ইন্দোনেশিয়া

সিনোভ্যাকের সেই চিঠি সবচেয়ে বেশি মুসলমান জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় অনেকের মধ্যে ভরসা জাগালেও আলেমরা বিস্তারিত তথ্য চাইলেন। কারণ শূকরের শরীরের সামান্যতম উপাদানও যদি থাকে, সেই টিকা আর ‘হালাল’ থাকবে না, তাতে অনেক মুসলমান টিকা নিতে আগ্রহী হবেন না।

শেষ পর্যন্ত সিনোভ্যাক বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে, কিন্তু তাতে সময় নিয়ে ফেলেছে অনেক বেশি। তাদের চিঠি ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে এ সপ্তাহে।

চীনা কোম্পানির এই বিলম্ব মহামারীর মধ্যে বেকায়দায় থাকা ইন্দোনেশিয়ায় টিকাদান শুরুর কাজটিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়াতেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ১৫ মাসের মধ্যে ১৮ কোটি ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে চায় দেশটির সরকার। 

কিন্তু সিনোভ্যাকের টিকা নিরপাদ কি না, সেই প্রশ্নের সঙ্গে এখন উত্তর খুঁজতে হচ্ছে এ টিকা ‘হালাল’ কি না, বা ইসলাম অনুমোদন করে কি না। ফলে সরকারের কাজ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো সরাসরিই বলেছেন, “এই টিকা হালাল না হারাম- সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠা উচিৎ নয়। করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে আমরা তো এখন জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে আছি।”

ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ হাত্তা বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ হাত্তা বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও ইন্দোনেশিয়ায় ইতোমধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি মানুষের।

সরকার ঠিক করেছে, শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। আর প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নিজেই প্রথমে টিকা নিয়ে দেখাবেন, এখানে ভয়ের কিছু নেই।

কিন্তু টিকাদান শুরুর আগে সিনোভ্যাকের টিকাকে ইন্দোনেশিয়ার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেতে হবে। ওই টিকা যে নিরাপদ ও কার্যকর, সে বিষয়ে নিশ্চিত হলেই অনুমোদন দেওয়া হবে। 

ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার উলামা কাউন্সিল থেকেও আলাদাভাবে অনুমোদন পেতে হবে সিনোভ্যাকের টিকাকে। কোন পণ্য হালাল আর কোন পণ্য নয়, আলেমদের এই কাউন্সিলই তা ঠিক করে দেয়। 

মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত মুসলিম প্রধান দেশ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকায় যদি ‘শূকরের শরীরের কোনো উপাদান থেকেও থাকে, তারপরও তা নিতে কোনো সমস্যা নেই। 

গত মাসে ভ্যাটিকানও এক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে, ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রেও করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ‘নৈতিক’ অনুমোদন আছে।

কিন্তু ইন্দোনেশিয়া এখনও অপেক্ষায় আছে ধর্মীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের জন্য।

দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি বায়ো ফার্মার মুখপাত্র বাংবাং হেরিয়ানতো বলেন, “ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রে এখানে নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং মানের পর গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয় হল- সেটা হালাল কি না।”

উলামা কাউন্সিলকে একটি ফতোয়া দিতে হবে যে, সিনোভ্যাকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ। আর এই কাউন্সিল কীভাবে বিষয়টি দেখছে তার বিরাট প্রভাব থাকবে ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার বড় একটি অংশের ওপর, বিশেষ করে যারা রক্ষণশীল মুসলমান।

২০১৮ সালে
হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় বড় পরিসরে টিকা দেওয়ার
পরিকল্পনা নিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সরকার। কিন্তু যে টিকাটি পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া সম্ভব
ছিল, সেটি নিয়ে বিপত্তি দেখা গেয়, কারণ তাতে শূকরের শরীরের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছিল।

পরীক্ষা করার
পর ইন্দোনেশিয়ার উলামা কাউন্সিল ফতোয়া দেয়, সাধারণভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে ওই টিকা ‘হারাম’,
কবে হামের প্রাদুর্ভাব যেহেতু জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, এই টিকার ব্যবহার অনুমোদন
যোগ্য।

উলামা কাউন্সিল
ছাড়পত্র দিলেও তাদের ওই পর্যবেক্ষণের কারণে ইন্দোনেশিয়ার কিছু অংশে স্থানীয় ধর্মীয়
নেতারা ওই ‘হারাম’ ভ্যাকসিন ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত যত শিশুকে টিকা দেওয়ার
পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার ৭২ শতাংশকে দেওয়া সম্ভব হয়। প্রায় এক কোটি শিশু টিকার বাইরে
থেকে যায়।