খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আরিফ মাহমুদ লিটন একথা জানান।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের চিঠি পেয়ে গত
সোমবার খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাইফুজ্জামান
আগামী ২৬ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
বিচার স্থগিত হওয়ার আগে এই মামলায় ১৮
জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল।
১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে খুলনা নগরীর
স্যার ইকবাল রোডে গুলিতে শেখ আবুল কাশেম ও তার গাড়ি চালক মিখাইল নিহত হন।
শেখ আবুল কাশেম খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির
সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি।
মামলার এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৪ সাল থেকে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়েছিল।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের
২৫ এপ্রিল সকালে নগরীর খুলনা সদর থানার অদূরে স্যার ইকবাল রোডে বেসিক ব্যাংকের সামনে
হামলাকারীরা গুলি করে শেখ আবুল কাশেম ও তার গাড়ি চালক মিখাইলকে হত্যা করে।
এই ঘটনায় খুলনা থানায় মামলা হয়; সিআইডি
মামলার তদন্ত করেছে।
১৯৯৬ সালের ৫ মে সিআইডির সহকারী পুলিশ
সুপার ইকবাল হোসেন ব্যবসায়ী সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (বর্তমান মৃত), হোটেল ব্যবসায়ী তরিকুল
হুদা টপি, তৎকালীন জাপা নেতা ও পরিবহন
ব্যবসায়ী আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস, জাপা নেতা ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু (বর্তমান মৃত), খুলনা
চেম্বারের বর্তমান সভাপতি কাজি আমিনুল হক, ওসিকুর রহমান, মোশফেকুর রহমান, মফিজুর রহমান,
মিল্টন ও তারেকের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পিপি আরিফ মাহমুদ লিটন জানান, ২০০৯ সালে
এক আসামির আবেদনে উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে; যা ২০১৩ সালে প্রত্যাহার
করে উচ্চ আদালত।
তিনি আরও জানান, এরপর মামলার আরেক আসামি
আবদুল গফ্ফার বিশ্বাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের মার্চে মামলাটি ছয় মাসের
জন্য ফের স্থগিত করে উচ্চ আদালত।
পিপি বলেন, গত সোমবার ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের
চিঠি খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর ওই মামলার কার্যক্রম
পরিচালনার জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন ওই আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান।
উচ্চ আদালতের চিঠির বরাত দিয়ে পিপি আরিফ
মাহমুদ লিটন আরও বলেন, উচ্চ আদালত ওই মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে ২০১৮ সালের
অগাস্টে। আর তাতে আদালতের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
“অজানা কারণে ওই চিঠি খুলনায় আসতে এতদিন
লেগেছে।”
খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন
ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মো. ছায়েদুল হক বলেন, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে
মামলাটি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আসে। ওই সময় একজনের সাক্ষ্য
গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ২০০৮ সালে চাঞ্চল্যকর
মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে আরও ১৭ জনের সাক্ষ্য
গ্রহণ করা হয়।
“কিন্তু ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি
না হওয়ায় ওই বছরই তা আবার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চলে আসে।”
ছায়েদুল আরও বলেন, এতদিন স্থগিতাদেশ থাকায়
মামলাটি ওইভাবেই পড়েছিল। উচ্চ আদালতের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় মামলার কার্যক্রম শুরু
হয়েছে।
আর যেন কোনোভাবেই মামলাটি স্থগিত করা
না হয় সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের কাছে অনুরোধ করেছেন আবুল কাশেমের
ভাইপো ও হত্যা মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান।
নিহতের বড়োভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবুল
হোসেন বলেন, মামলার বাদী ১৪ বছর আগে মারা গিয়েছেন। প্রধান সাক্ষী আসাদুজ্জামান লিটু
ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তাও মারা গেছেন।
“বিচারের ভার আমরা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”
নিহত কাশেমের স্ত্রী-সন্তানরা এই ব্যাপারে
কোনো কথা বলতে রাজি হননি।