গতবছর এ সময়ে জেলার বেশিরভাগ খামারির মধু বিক্রির বায়না হয়ে গিয়েছিল বলে ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
এবার মহামারীর মধ্যে মধু বিক্রিতে ‘সাময়িক মন্দাভাব’ দেখা দিলেও কিছুদিন পর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা।
সদর উপজেলার বাল্য, ডেফুলিয়া, তেঘরিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, বেঙ্গা বেরইল, মঘি, আঙ্গারদহসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। সেখানে মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য অসংখ্য বাক্স বসিয়েছেন।
গ্রামের প্রায় প্রতিটি মাঠে যেন হলুদ চাদর বিছানো। সরিষা ফুলের গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জরণে মধুময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে তাঁবু খাটিয়ে মাঠেই অবস্থান করছেন।
ইতোমধ্যে একেকজন মৌ চাষি ১৫ থেকে ২০ মণ করে মধু সংগ্রহ করেছেন। তবে ক্রেতার অভাবে বিক্রি না হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
সদরের তেঘরিয়া মাঠে সরিষা ক্ষেতের পাশে শতাধিক বাক্স স্থাপন করেছেন ভাই-ভাই মৌ খামারের মালিক ইসরাইল হোসেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মধু কিনে নিয়ে বাজারে তোলেন বলে জানান এই মৌ চাষি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি সরিষা ফুল থেকে ২০ মন মধু সংগ্রহ করেছেন। গত বছর এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা মধুর জন্য বায়না দিয়েছিলেন। এ বছর এখনও মধু কেনার জন্য কোনো কোম্পানি বা বাইরে থেকে কোনো ‘পার্টি’ আসেনি।
“স্থানীয়ভাবে খুচরা দুই-পাঁচ কেজি মধু বিক্রি হলেও জেলার অধিকাংশ মৌখামারির একই অবস্থা, যে কারণে অধিকাংশ খামারির উৎপাদিত প্রায় সব মধুই ঘরে পড়ে আছে।”
এবারের সংগৃহীত সব মধু বিক্রি না হলে তিনিসহ জেলার মৌ চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে ইসরাইল হোসেনের শঙ্কা।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সজল বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মধু আহরণের পাশাপাশি পরাগায়নের ফলে সরিষার উৎপাদনও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
“মহামারীর শুরুতে মধুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। সে সময় অনেকে বেশি পরিমাণ মধু সংগ্র করেছেন, যা এখনও ঘরে মজুদ রয়েছে। এ কারণে এখন মধুর চাহিদা কম।”
কৃষি সম্প্রসারণ আধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ চাষিরা ‘প্রায় দেড় হাজার’ মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন, যেখান থেকে কমপক্ষে ৫ মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হবে।
জেলায় ১৫ জন বড় মৌ চাষি থাকলেও ছোটোখাটো আরও অনেকে মধু সংগ্রহ করেন। গতবছর এ সময়ের মধ্যে প্রায় সব মধু বিক্রি হয়েছিল বলে সুশান্ত জানান।
তিনি বলেন, “শুরুতে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা মাগুরা থেকে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে মধু বিক্রি বৃদ্ধি পাবে এবং মৌ খামারিরাও লাভবান হবেন।”