বুধবার দুপুরে নগরীর রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন
সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি নেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং মানবতাবরোধী
অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত এ স্মারকলিপি দেন।
এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের
সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্য
জাতীয় স্বার্থে এটি রক্ষা করা দরকার। দুঃখজনক হলেও সত্যি শকুনের দৃষ্টি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ
স্থাপনার ওপরই পড়ে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এই শহরে রাতের আঁধারে বেদখল হয়ে গেছে।
“এটাও বেদখল হয়ে যেত। অ্যাডভোকেট
রানা দাশগুপ্ত সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং সাহসের সাথে সেটা ঠেকিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর
কাছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে চিঠি লিখব যাতে ভবনটি সংরক্ষণ করা যায়। কিভাবে ভুয়া কাগজপত্র,
দলিল-দস্তাবেজ দিয়ে আদালত থেকে রায় আনা হয়েছে তার একটা বিচারিক তদন্ত হওয়া দরকার। হাই
কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এর সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার।”
সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বলেন, “জায়গা-সম্পত্তির
অনেক মামলা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পড়ে থাকে, নিষ্পত্তি হয় না।কিন্তু এটা কিভাবে
রাতারাতি সবকিছু হয়ে গেল তা দেখা উচিত।
“বিভ্রান্তি দূর করতে প্রধান রাজনৈতিক
দলসহ সবাইকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা দরকার। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন- জায়গাটি
যিনি কিনেছেন তার দোষ কি? তাদের বলতে হবে যে- জমিটি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত। এটা
রাষ্ট্রের সম্পত্তি। কেউ ইচ্ছে করলেই একটা মিথ্যা দলিল বানিয়ে রাষ্ট্রকে ব্ল্যাকমেইল
করতে পারে না।”
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত
বাড়িটি রক্ষায় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা একা নন, চট্টগ্রামের ষাট
লাখ মানুষ আপনাদের সাথে আছে। শকুনিরা যতই শক্তিশালী হোক তারা সফল হতে পারবে না।”
বুলডোজার ঠেকালেন রানা দাশগুপ্ত, রক্ষা পেল ঐতিহাসিক বাড়ি
‘যাত্রামোহনের বাড়ি রক্ষায় প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা’
যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িতে স্থিতাবস্থা জারি
শুরুতে সিটি করপোরেশনের প্রশাসককে
দেওয়া স্মারকলিপি পাঠ করেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর রানা দাশগুপ্ত
বলেন, “আমাদের এই আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দলকে পাশে চাই। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান
চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি সম্যক বিষয় অবহিত। আমাদের আন্দোলন সম্পর্কেও
তিনি জানেন। সংসদ সদস্য হিসেবে তার এলাকায় এই ঐতিহাসিক বাড়িতে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবিকে
তিনি যৌক্তিক মনে করছেন এবং এই আন্দোলনে তিনিও আমাদের সঙ্গে আছেন বলে জানিয়েছেন।
“চট্টগ্রামের জাতীয় পার্টির নেতারা
এসে আন্দোলনের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে সংহতি জানিয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবেও
আমাকে বলেছেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে তিনি আছেন।”
তিনি বলেন, “প্রশাসক মহোদয়ের বক্তব্য
অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চট্টগ্রামের নেতাদেরকেও বিষয়টি অবহিত করব।
আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জে এম সেনের যে ভবনটির সঙ্গে জড়িত আছে ব্রিটিশ ভারত থেকে
বাংলাদেশ পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস, এই ভবনটি সরকার রক্ষা করুক।”
জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তিতে পড়ে উল্লেখ
করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “এর কোনো দাবিদার না থাকলে সরকার নিজের কাস্টডিতে নিয়ে যেতে পারবে। খাস জমি
হিসেবে গণ্য করতে পারবে। সরকারি জমিতে সরকার অবশ্যই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার একটি ইতিবাচক
পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকও ফোন করে যেসব ঐতিহাসিক স্থান বেহাত
হয়েছে বা বেহাত হয়নি, তার একটি তালিকা চেয়েছেন। আমরা সবার সম্মিলিত সহযোগিতা চাই।”
এসময় দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, চট্টগ্রাম
ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।