ক্যাটাগরি

কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোয় গুরুত্ব কৃষিমন্ত্রীর

বৃহস্পতিবার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কাউন্সিল হলে ‘বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি। আইইবির কৃষি প্রকৌশল বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। 

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এসডিজিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করতে হবে। উৎপাদনশীলতা ডাবল করতে হলে আপনাকে মেকানাইজেশন করতে হবে। আন্ডার ডেভেলপিং কান্ট্রিগুলোতে মেকানাইজেশনের মাধ্যমে এলডিসি কান্ট্রিগুলোতে শ্রমিকের নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।”

তিনি জানান, গত বছর ১৪ জুলাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার ২০ কোটি ছয় লাখ ৮৫ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ আট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ১০২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্র কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করবে, যেখানে কৃষকরা হাওর অঞ্চলে ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য অঞ্চলে যন্ত্র ক্রয়ে ৫০-৬০ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন।

প্রকল্পের আওতায় ধান গম ও ভুট্টার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রিপার বাইন্ডার, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, সিডার বা বেড প্ল্যান্টার, পাওয়ার থ্রেসার, মেইজ শেলার, ড্রায়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, পটেটো ডিগার, ক্যারেট ওয়াশার ও আলুর চিপস তৈরির যন্ত্র কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।

এর আগে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১২-১৯ সাল মেয়াদে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উত্পাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন খরচও কমেছে। এছাড়া যন্ত্রপাতি ব্যবহারে শস্য সংগ্রহোত্তর অপচয় কমেছে ২০-৯০ শতাংশ, ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে ১৯০-২০৪ শতাংশ, প্রকল্প এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।

তাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্বারোপ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “অর্থনীতিতে কৃষির সার্বিক জিডিপিতে অবদান ছিল প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। যেটা কমতে কমতে এখন ১৪ ভাগের নিচে চলে আসছে। আরেকটি হল, আমাদের সার্ভিস সেক্টরের অবদান বেশি ৫৫ এর কাছাকাছি।

“আমাদের সরকারের যে কৌশল, আমরা চাই যে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরটা এক্সপান্ড করুক। আমাদের শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতিতে শিল্পের গুরুত্ব আর অবদান আরও বাড়াতে চাই। কাজেই অবকাঠামোগত বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের শিল্প কারখানাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে, এক্সপোর্ট সাবস্টিটিউট অর্থাৎ যে সমস্ত জিনিস বিদেশে রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি, এমন শিল্প করতে হবে এবং ইমপোর্ট সাবস্টিটিউট দুইটাই লাগবে।”

কৃষিমন্ত্রী জানান, ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো, পরামর্শ প্রদান ও জনপ্রিয় করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য আমদানি নির্ভর না হয়ে স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা জাপানের ইয়ানমার কোম্পানি, ভারতের মাহিন্দ্রসহ অনেকের সাথে আলোচনা করেছি। তাদেরকে এদেশে যন্ত্রপাতি তৈরির বা অ্যাসেম্বল কারখানা স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারলে একদিকে যেমন যন্ত্রপাতির দাম কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।”

জাপানের ইয়ানমার এদেশে অন্ততপক্ষে যন্ত্রপাতি অ্যাসেম্বল কারখানা স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে আইইবির কৃষি কৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোয়াজ্জেম হুসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী নূরুল হুদা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. মঞ্জুরুল আলম, প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন শিবলু, প্রকৌশলী মিছবাহুজ্জামান চন্দন, প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফার্ম মেশিনারি অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আইয়ুব হোসেন।