ক্যাটাগরি

ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি চট্টগ্রামের সমাবেশে

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা এবং এর সাথে যুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে শুক্রবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে নাগরিকরা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সুতিঁকাগার চট্টগ্রাম সবসময় সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবিভক্ত ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

‘‘অথচ সেই বাড়িসহ আমাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো ভেঙে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে বারবার। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বুলডোজার দিয়ে। সরকারের পক্ষ থেকে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতে করে মৌলবাদীরা এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পায়।’’

সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, “যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির আইনি জটিলতা নিরসনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এজন্য সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল স্থাপনাকে আমরা হারিয়ে যেতে দিব না। এই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমরা তুলে ধরব।”

মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা ভাঙার ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হোক এবং এসব স্থাপনা সংরক্ষণ করে জাদুঘর বানাতে হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে এই ভাঙচুর চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এসব স্মৃতিচিহ্ন ঐতিহ্য এবং বধ্যভূমি রক্ষা করতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে সম্মিলিতভাবে রাজপথে থেকে।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, অতীতে লালন ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গা হয়েছে। এসবের বিচার হয়নি বলেই এবার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির ওপর আঘাত এসেছে। তিনি সমাবেশ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা ভাঙার সাথে যুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সাংবাদিক মিন্টু চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন একাত্তরের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, নারী নেত্রী নুর জাহান খান, খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, উদীচী’র সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান, সাংবাদিক মাসুদুল হক, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিক, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনীর চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

সমাবেশ শেষে ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষার দাবিতে ‘নাগরিক পদযাত্রা’ নগরীর রহমতগঞ্জে যাত্রামোহন সেনগুপ্তর বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাপণী বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা।

কর্মসূচি থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা এবং তা সংরক্ষণসহ পাঁচদফা দাবি ঘোষণা করেন সাংবাদিক প্রীতম দাশ।