শুক্রবার চট্টগ্রাম
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (সিসিসি) প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা
আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী
এম রেজাউল করিম চৌধুরী সুষ্ঠু ভোটের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত
হোসেন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছরের ২৯ মার্চ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে
নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহ আগে ভোট স্থগিত করা হয়।
নির্ধারিত সময়ে ভোট
করতে না পারায় অগাস্টের শুরুতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়
সরকার। এখন ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।
গত ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন
কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোটের
নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।

শুক্রবার বহদ্দারহাট এলাকার একটি মসজিত থেকে জুমার নামাজ আদায় করার পর পিতা-মাতার কবর জিয়ারত শেষে প্রথম প্রচারনায় নামে আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
ভোট সামনে রেখে দুপুরে
নগরীর বহদ্দার বাড়ি এলাকায় বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগের
মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
আর বিএনপির মেয়র প্রার্থী
নগর কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন হযরত আমানত শাহ (রা.)- এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে
নির্বাচনী প্রচারণার উদ্বোধন করেন।

শুক্রবার জামালখান চেরাগী পাহাড় এলাকায় প্রথম প্রচারনা শুর করে বিএনপির প্রার্থী ডা. মো. শাহাদাত হোসেন।
প্রচারণার মধ্যে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। বাধা দিইও নাই।
দেবও না। ইভিএমে ভোট হবে। মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে।”
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে
তিনি বলেন, “একটা দল আছে তারা সরকারের ভালো দিকগুলো দেখে না। ওরা শুধু নালিশ আর অভিযোগ
আর বায়বীয় কথা বলে। দলটি ক্ষয়িষ্ণু দলে পরিণত হয়েছে। তাই খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়। তাদের
কথায় মানুষ বিভ্রান্ত হয় না। মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”
নির্বাচিত হলে হোল্ডিং
ট্যাক্স না বাড়ানো, ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত
নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল।

শুক্রবার বহদ্দারহাট এলাকার একটি মসজিত থেকে জুমার নামাজ আদায় করার পর পিতা-মাতার কবর জিয়ারত শেষে প্রথম প্রচারনায় নামে আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “প্রতিশ্রুতি
হচ্ছে, জনগণ আমাকে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করলে- এই চট্টগ্রামের মানুষের
মাঝে আতঙ্ক আছে ক্ষোভ আছে, এটা নিয়ে আমি নিজেও আন্দোলন করেছি। এলাকার মানুষও আন্দোলন
করেছে। যেমন হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে। হোল্ডিং ট্যাক্স আমি বাড়াব না। জনগণের উপর
অসহনীয় কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করা হবে না।
“আরেকটা আছে যেমন করোনাকালে
দেখেছি মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বিপদ বলে কয়ে আসে না। মানুষ যাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য
সেবা পায় সেজন্য ৪১টা ওয়ার্ডে ৪১টা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তুলব। মানুষ একটু শান্তি
চায়। সন্ত্রাস ও মাদক পাড়ায় পাড়ায় খুঁটি গেড়ে বসেছে। এগুলো হল শতকরা পাঁচজন। ৯৫ জন
লোক ভালো। তাদের নিয়ে চট্টগ্রামকে শতভাগ না পারলেও ৮০-৯০ ভাগ মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত
নগরীতে পরিণত করব।”
প্রচারের প্রথম দিনেই
ভোটারদের কাছ থেকে ‘সাড়া পাচ্ছেন’ জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, “করোনাকালে মানুষ যখন বিপদগ্রস্ত
ছিল তখন তারা আমাকে কাছে পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষ বিপদে যাকে কাছে পায় তাকে হৃদয়ে
স্থান দেয়।”
আওয়ামী লীগের মেয়র
প্রার্থী বলেন, “কোভিডের কারণে এবার প্রচারণা ভিন্ন ধরনের হবে। যদিও মানুষের মাঝে তেমন
আতঙ্ক নেই তবু বলব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। ভোটাররা এবং কর্মী বাহিনী যাতে সুস্থ
থাকে সেদিকে লক্ষ রেখে আমি প্রচারণা চালিয়ে যাব।”
ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে
দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোটের মাঠে থেকে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেজাউল বলেন,
“বিদ্রোহীরা অনেকে সরে যাচ্ছেন। কালকের মধ্যেও চারজন উইথড্র করেছেন। এটা আমার এখতিয়ার
নয়। মহানগর আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আছেন। উনারা যেভাবে সিদ্ধান্ত
নেবেন সেভাবে এগিয়ে যাব।”
এ সময় নগর আওয়ামী লীগের
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন,
কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক শফিকুল
ইসলাম ফারুক, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফর আলী, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ
মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ১ নম্বর দক্ষিণ
পাহাড়তলী ওয়ার্ডে প্রচার শুরু করে স্বচ্ছ ও স্মার্ট সিটির অঙ্গীকার করেন রেজাউল।
প্রথম দিনে ২ নম্বর জালালাবাদ এবং ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডেও গণসংযোগ করেন তিনি।

শুক্রবার জামালখান চেরাগী পাহাড় এলাকায় প্রথম প্রচারনা শুর করে বিএনপির প্রার্থী ডা. মো. শাহাদাত হোসেন।
আনুষ্ঠানিক প্রচার
শুরু করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত বলেন, “গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা সমুন্নত
রাখতেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু বিগত নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটচুরির যে মহোৎসব দেখেছে তাতে ভোটারেরা
আতঙ্কিত। তাই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জনগণ
ভোট কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
“সারা দেশের মানুষ
তাকিয়ে আছে এই নির্বাচন কমিশন কবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে
এবং ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে অবশ্যই ধানের শীষের বিজয় হবে।”
জেল রোড মাজার গেইট
থেকে তার প্রচারণা শুরু হয়ে বান্ডেল রোড, বংশাল রোড, ফিরিঙ্গিবাজার মোড়, কোতোয়ালি
মোড়, লালদিঘিরপাড়, বক্সিরহাট হয়ে আন্দরকিল্লার মোড়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় ডা. শাহাদাত
হোসেন বলেন, “মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে বিশ্বের কাছে অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে
গড়ে তুলব। কর্ণফুলী নদীকে পরিবেশবান্ধব করে চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে রূপান্তরিত করব।
জনগণের পাশে থাকব এবং জনগণের পরামর্শ নিয়ে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত নগর হিসেবে গড়ে
তুলব।”
প্রচারে অংশ নিয়ে বিএনপির
কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে
নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত
হলেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় আসবে।
“বিএনপির নেতাকর্মীদের
বিরুদ্ধে অনেক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হয়েছে, কোনো ষড়যন্ত্র আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে
নাই। আমরা শপথ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। যত বাধা-বিপত্তি আসুক সকল বাধার প্রাচীর
ডিঙিয়ে বিজয় অর্জন করব। ডা. শাহাদাত হোসেন একজন সৎ ও যোগ্য রাজনীতিবিদ। সকল ভেদাভেদ
ভুলে ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জন্য কাজ করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত বিজয় নিশ্চিত
করতে হবে।”
নগর বিএনপির সদস্য
সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির
সদস্য এরশাদ উল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, আব্দুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম,
কাজী বেলাল উদ্দীন, নগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি
এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জেলী
চৌধুরী, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম, সদস্য
সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনসহ নেতাকর্মীরা প্রচারে অংশ নেন।