প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১২ দিন। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন।
তাবে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই চান, মেয়াদ পুরো হওয়ার আগেই ট্রাম্পের বিদায় হোক।
বিবিসি বলছে, এই সময়ে ট্রাম্পকে ক্ষমতা ছাড়া করার কয়েকটি পথ আছে ডেমোক্র্যাটদের সামনে। তবে তার কেনোটি যে চূড়ান্ত পরিণতি পাবে, সেই সম্ভাবনা কম।

বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলার সময় ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা।
২৫তম সংশোধনী
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতায় উসকানির’ অভিযোগ এনে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং ক্ষমতাসীন মন্ত্রিসভার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি এবং সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা চাক শুমার।
সেরকম কিছু করতে গেলে মাইক পেন্সকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
২৫তম সংশোধনীতে কী আছে? সেখানে বলা হয়েছে,
প্রেসিডেন্ট যদি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে ‘অপারগ’ হন, তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিতে পারেন।
কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কীভাবে তা কাজে লাগানো সম্ভব? ওই সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তাকে ‘দায়িত্ব পালনে অপারগ’ ঘোষণা করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে ‘দেশ শাসনে অক্ষম’ এবং ‘দায়িত্ব হস্তান্তরে অপারগ’ ঘোষণা করে প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটের স্পিকারকে চিঠি দিতে হবে তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, তখন ক্ষমতা চলে যাবে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে।
সেরকম হলে ট্রাম্প কী করতে পারেন? নিয়ম অনুযায়ী, তাকে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি যদি সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার থাকবে কংগ্রেসের ওপর। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হাউজ ও সেনেট- দুই জায়গাতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে।
ভোটাভুটির মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
বিবিবি লিখেছে, ডেমোক্র্যাটরা যতই আহ্বান জানাক, ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এবং মন্ত্রিসভার অন্তত আটজন সদস্য ট্রাম্পের পক্ষ ত্যাগ করে ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করবেন, সেই সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
মেয়াদ শেষের আগেই ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ডাক
বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা, নিহত ৪
ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় ‘স্তম্ভিত বিশ্ব’

অভিশংসন
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স যদি তাদের ডাকে সাড়া না দেন, তাহলে তিনি দ্বিতীয়বারের মত ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে জিততে বিদেশি সহায়তা চাওয়ার অভিযোগে ট্রাম্প এরই মধ্যে একবার অভিশংসিত হয়েছেন; তবে তাকে তখন ক্ষমতা থেকে সরানো হয়নি। সেনেট তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল।
কিন্তু ক্যাপিটল ভবনে বুধবারের হাঙ্গামার পর সেজন্য ট্রাম্পকে দায়ী করে অভিশংসনের নতুন খসড়া আর্টিকেল তৈরির তোড়জোড় শুরু করেছেন কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর। সেটা কাজে লেগে গেলে ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুবার অভিশংসিত প্রথম প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু সেজন্য প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রস্তাব আনতে হবে এবং তা ভোটে পাস হতে হবে।
প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পক্ষে রায় দিলে তাকে অপসারণের জন্য প্রস্তাব যাবে সেনেটে। সেজন্য সেখানে দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন হবে।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনোই সেরকম কিছু ঘটেনি। বর্তমানে সেনেটের অর্ধেক ভোট রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের হাতে। প্রেসিডেন্টকে অপসারণের জন্য রিপাবলিকানদের ভোটও তাদের লাগবে। কিন্তু সেরকম কোনো লক্ষণ রিপাবলিকানদের মধ্যে এখনও দেখা যাচ্ছে না।
আর সবচেয়ে বড় কথা, মাত্র ১২ দিনের মধ্যে এতকিছু করা সম্ভব কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত ডনাল্ড ট্রাম্প
অভিসংশন বিচারে টিকে গেলেন ট্রাম্প

ট্রাম্প কি নিজেকে দায়মুক্তি দিতে পারেন?
ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে যাদের বিভিন্ন অভিযোগে সাজা হয়েছিল, তাদের অনেককেই মেয়াদের শেষ বেলায় এসে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, ট্রাম্প এখন নিজেকেও ক্ষমা করে দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা ওজন করে দেখছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমনিতেই অনেকগুলো অভিযোগের তদন্ত চলছে। ব্যাংক, ব্যবসায়িক অংশীদার ও কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতারণার একটি অভিযোগও রয়েছে তার মধ্যে।
এখন প্রশ্ন হল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কি নিজেকেও ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখেন?
বিবিসি লিখেছে, এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ততম উত্তর হল- আমরা এখনও জানি না। সংবিধানে সংক্ষিপ্ত ভাষায় ক্ষমার বিষয়টি বলা হয়েছে, যদিও এর ব্যাপ্তি অনেক ব্যাপক। এর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেকেই ক্ষমা করেছেন- এমন কোনো নজিরও ইতিহাসে নেই।
আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এক্ষেত্রে রিচার্ড নিক্সনের সময় বিচার বিভাগের একটি মেমোর উদাহরণ টানেন। প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করার আগে বিচার বিভাগের ওই মেমোতে বলা হয়েছিল, তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না, কারণ সাধারণ নিয়মেই কেউ তার নিজের বিচার করতে পারে না।
কেউ কেউ অবশ্য বলেন, প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না, এমন কোনো বিধিনিষেধ সংবিধানে দেওয়া হয়নি।
বিচার বিভাগের আরেকটি লিগ্যাল মেমোর বরাতে সিএনএন লিখেছে, প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না। তবে তিনি পদত্যাগ করে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং তার কাছে ক্ষমার আবেদন করতে পারেন। তবে সেই লিগ্যাল মেমোও চূড়ান্ত কিছু নয়।
প্রেসিডেন্ট কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন? ‘জানতে চাইছেন’ ট্রাম্প