নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়ায় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে যৌথ
অধিবেশন চলার মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকরা মিছিল করে ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড় হয়। এক পর্যায়ে
তারা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর
চালায়। ওই ঘটনার সময় দায়িত্বরত এক ক্যাপিটল পুলিশ কর্মকর্তা এবং ট্রাম্প ভক্ত বিমান
বাহিনীর সাবেক এক নারী কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র
সরকারের প্রাণকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া এই সহিংস ঘটনা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। দেশটির
নাগরিকরা এখনও ভয়াবহ ওই ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অনেকের কাছেই এখনও বিষয়টি বোধগম্য
হচ্ছে না।
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের
সবচেয়ে ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই ভবনে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের
অধিবেশন চলাকালে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো সংবেদনশীল
বিষয় নিয়ে বিতর্ক চলার সময় হাজারো ট্রাম্প সমর্থক ওই ভবন ঘিরে সব নিরাপত্তার বলয় ভেঙ্গে
জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে এমন তাণ্ডব চালাল, তা এখনও তাদের কাছে বিরাট প্রশ্ন হয়ে আছে।
ঘটনার নানা ছবি ও ভিডিওতে
দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা ভবনের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর করছেন, চিৎকার করছেন। ট্রাম্প সমর্থকদের
কেউ কেউ নিজেদের ওই কাণ্ডের ছবি তুলছেন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার
করছেন। কেউ কেউ ভবনে থাকা ঐতিহাসিক নানা জিনিসপত্র ভেঙে ফেলছেন বা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।

গণমাধ্যমের খবরে বা
অনলাইনে যখন ওই সব ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল তখন অনেকের কাছে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল,
এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে দেশের প্রায় সব আইনপ্রণেতারা এতটা সংবেদনশীল একটি বিষয়
নিয়ে যখন আলোচনা করছেন তখন ওই ভবনের নিরাপত্তার প্রস্তুতির এই হাল কেন?
কোথায় ইউএস ক্যাপিটল
পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য, যাদের কাজ ক্যাপিটল ভবন এবং তার মাটিকে সুরক্ষিত রাখা।
কেন তারা সময়মতো ট্রাম্প সমর্থকদের থামাতে পারেনি? ট্রাম্প সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে প্রচার চালিয়েই ওই বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করেছিল। তারা আক্রমণের হুমকিও দিয়েছিল।
কেন তবে তাদের আটকাতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি?
বিক্ষোভকারীরা ভবনের
ভেতর ঢুকে গেলে অনেক কংগ্রেস সদস্যকে নিজেকে বাঁচাতে চেয়ার বা টেবিলের নিচে মাথা নিচু
করে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। পরে তাদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর কয়েক
ঘণ্টার চেষ্টায় দাঙ্গাকারীদের হটিয়ে দেওয়ার পর আবার অধিবেশন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের
ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। এ ঘটনার পর ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৫ দিন অর্থাৎ আগামী ২১ জানুয়ারি
পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান
হবে।
এটা কি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা?
বুধবারের সহিংস ঘটনার
পর ক্যাপিটল ভবন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া
ভিডিওতে দেখা যায়, ভিড় দেখে পুলিশ দ্রুত লাইন ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। দাঙ্গাকরীদের
অনেকে বর্ম পরে ছিলেন। কারও কারও হাতে দেশি অস্ত্র, কারও হাতে রাসায়নিক স্প্রে ছিল।
তারা ভবনের ভেতর ঢুকে
কয়েক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। তারপরও পুলিশকে তাদের ঘিরে ধরে ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে
সাহায্য করতে দেখা যায়। গ্রেপ্তার করার পরিবর্তে পুলিশ তাদের কাউকে কাউকে পথ দেখিয়ে
ভবনের বাইরে নিয়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে নামতে এবং দরজা খুলতে সাহায্য করে।
ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে
ক্যাপিটল ভবনে ভাংচুরের সময় এক পুলিশ সদস্যকে এক ব্যক্তির সঙ্গে ‘সেলফি’ তোলার জন্য
পোজ দিতে দেখা যায়।
ওই দিন গোলযোগে অংশ
নেওয়া একজন যুক্তরাষ্ট্রের চরম ডানপন্থি দল ‘প্রাউড বয়েজ’ এর খুব চেনা সদস্য নিক ওচস।
তিনি ক্যাপিটল ভবনের ভেতর সেলফি তুলে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন।
পরে তিনি সিএনএনকে
বলেন, “যেখানে হাজার হাজার মানুষ ছিল…পরিস্থিতির উপর তাদের (নিরাপত্তা বাহিনীর) কোনো
নিয়ন্ত্রণই ছিল না। আমাকে ভবনের ভেতরে যেতে কেউ থামায়নি বা প্রশ্ন করেনি।”

ভাইরাল হওয়া আরেক ছবিতে
এক বিক্ষোভকারীকে সগর্বে হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ডেস্কে এক পা তুলে তার চেয়ারে
বসে থাকতে দেখা যায়। ছবিতে তাকে স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে। পেলোসির ডেস্ক থেকে একটি চিঠিও
চুরি করেন তিনি।
তারপরও এ ঘটনায় কেন
আটকের সংখ্যা এত কম, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি
বলেন, এই দেশ বিচারের দুটি ধরনের সাক্ষী হল।
“তার একটি হল গতকাল
ইউএস ক্যাপিটলে চরমপন্থিদের তাণ্ডব এবং অন্যটি হল গত সামারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে
(ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার) পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল ছোঁড়া। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে?
ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক
পেন্স বলেছেন, যারা বুধবারের সহিংসতায় জড়িত ছিল তাদের আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা
হবে।
ওই ঘটনার যত ছবি ও
ভিডিও অনলাইনে ঘুরছে তাতে সহিংসতাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণ
দেওয়া খুব বেশি কঠিন কাজ হবে না।
যদিও ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ
সহিংসতার ছবি ও ভিডিও মুছে দিয়েছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জনগণের কাছে সহিংসতায়
অংশগ্রহণকারীদের ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া সহিংসতার
বেশ কয়েকটি ছবির মুখও বেশ পরিচিত। তারা বিভিন্ন চরম ডানপন্থি দলের সদস্য।
ক্যাপিটল পুলিশের পক্ষ
থেকেও আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরুর কথা জানানো হয়েছে। আইরি বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের বিরল ও গুরুতর অভিযোগ আনা হতে পারে।
তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে ২০ বছরের কারাদণ্ডের হবে।
আরও খবর-
ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় ‘স্তম্ভিত বিশ্ব’
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা, নিহত ৪
ক্যাপিটলে দাঙ্গায় নিহত নারী মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা