ক্যাটাগরি

করোনাভাইরাস: শঙ্কার শীতে শনাক্তের হার কমে ৬ শতাংশের নিচে

ডিসেম্বরের শুরুতে প্রতিদিন শনাক্ত নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গড়ে হাজারের নিজেই থেকেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেভাগেই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবার নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া মৌসুম ও ভাইরাসের ধর্মও সংক্রমণ কমার পেছনে কারণ হয়ে থাকতে পারে।

তবে সামনে মাঘ মাস, শীতের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ার কথা। সবাই নিয়মিত মাস্ক না পরলে সংক্রমণের হার কম রাখা কঠিন হবে বলে সতর্ক করেছেন তারা।  

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি-ওই তিন মাস বাংলাদেশে শীত থাকে। এবার শীত কিছুটা আগে চলে এসেছে, তবে শীতের প্রকোপ অনেক বেশি এখনও হয়নি।  

“ডিসেম্বরের শৈত্যপ্রবাহ ঢাকায় আসেনি। জানুয়ারির ১১-১২ তারিখের পর থেকে তাপমাত্রা আবার কমবে। তখন আবার শৈত্য প্রবাহ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

অ্যান্টিজেন: ২৫ দিনে ১৭০৪ নমুনা পরীক্ষা

কোভিড-১৯: শীতে বেড়েছে পরীক্ষা, সঙ্গে ভোগান্তি

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ৩১ মে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপর জুন, জুলাই এবং অগাস্টে শনাক্তের হার ছিল ২০ এর কাছাকাছি থাকে।

এরপর শনাক্তের হার কমতে থাকে। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

অক্টোবর মাসে যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে ৪৪ হাজার ২৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সে সময় প্রতিদিন গড়ে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ১৪২০ জন রোগী। গড় শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

১ অক্টোবর শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ, ২৪ অক্টোবর তা কমে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়।

নভেম্বর মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৭ হাজার ২৪৮ জনে দাঁড়ায়। সে সময় দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৯০৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে শনাক্তের হারও বেড়ে ১৩ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়।

মহামারীর কোন পর্যায়ে বাংলাদেশ?

 

মহামারীতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাতাসের ধুলো

 

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর শনাক্ত রোগী এবং শনাক্তের হার কিছুটা কমে আসে। ডিসেম্বর জুড়ে যা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে ৪৮ হাজার ৫৫১ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। সে সময় প্রতিদিন গড়ে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৬ জনের বেশি রোগী।

পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের গড় হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।

এ বছরের জানুয়ারির প্রথম আট দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ১৮০ জন। দৈনিক গড়ে ৮৯৮ জন। এ সময় শনাক্তের গড় হার ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুক্রবার যে তথ্য দিয়েছে, তাতে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৮৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৯০ জন হয়েছে।

এই সময়ে সারা দেশে ১১৪টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৭টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৪০টি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে অর্থাৎ সর্বমোট ১৮১টি ল্যাবে ১৩ হাজার ৬৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-৩, রাইনো ভাইরাস এবং রেসপিরেটোরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এসব ভাইরাস সর্দিকাশি, জ্বর, নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। এর একটি প্রভাব করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার কমার পেছনে থাকতে পারে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এই ভাইরোলজিস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাইরাসের একটা নিয়ম হল- এরমধ্যে একটা ভাইরাস যদি মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে তাহলে অন্য ভাইরাসকে সে ঢুকতে দেয় না।

“আমাদের ইনডিজেনাস ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ আক্রান্ত হয়ে গেছে। অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে করোনাভাইরাস সেভাবে হয়ত আক্রমণ করতে পারেনি। আপনি হয়ত খেয়াল করবেন, গরমকালে আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। অগাস্টের পর থেকে সংক্রমণের হার কমেছে। অথচ আমরা চিন্তা করেছিলাম শীতে বেড়ে যাবে।”

ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় মানুষ এখন মাস্ক পরছে, এটা চালিয়ে গেলে সংক্রমণের হার কম রাখা হয়ত সম্ভব হবে।

২০২০: স্বাস্থ্যের যে যে রোগ চিনিয়ে দিল মহামারী

 

কোভিড-১৯: টিকা পাব কীভাবে?

করোনাভাইরাসের টিকা বিতরণ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে সংক্রমণ কমতে পারে। তবে এটা আবারও বাড়তে পারে, যদি মাস্ক ব্যবহার বাড়ানো না যায়।

“আমাদের দেশে সারাবছরই কোনো না কোনোভাবে মানুষের আচরণগত কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে বা কমতে পারে।”

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গঠিত ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা সবাই করেছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই সংক্রমণ ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।

“আগাম সতর্কতা হিসেবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ উদ্যোগ কাজে লেগেছে। হাসপাতালগুলোয় ভালো ব্যবস্থাপনা ছিল। সংক্রমণ বাড়ার যে ঝুঁকিগুলো ছিল সেগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। পিকনিক, বিয়ে, জনসভা, কনর্সাটের মত জনসমাগমের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছ। সব মিলিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।”

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এখন যে ধারা চলছে তা যদি ধরে রাখতে হলে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই।

“একটা বিষয় প্রমাণিত, যদি নিয়মিত মাস্ক পরি, নিয়ম মেনে চলি, তাহলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। সতর্কতামূলক যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে, শিথিল করা যাবে না।”