শনিবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুরের গোপালপুর কবরস্থানে দাফনের পর মেয়েটির মা জানান, তার মেয়ের বয়সের সব প্রমাণ দেখালেও পুলিশ বেশি বয়স দেখানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
তার অভিযোগ, পুলিশ মেয়েটির বয়স ১৯ বছর দেখানোর চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে ময়নাতদন্ত না করে লাশ ফেলে রাখে।’
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ওই ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিহানই গুরুতর অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক মেয়েটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাত্রীর চাচা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুল সার্টিফিকেট এবং পাসপোর্টে সুনির্দিষ্ট বয়স উল্লেখ থাকলেও পুলিশ মৃতদেহের সুরোতহাল রিপোর্টে মেয়েটির বয়স দুই বছর বেশি করে দেখানোসহ লাশ মর্গে নেওয়া হলেও নানা গড়িমসি ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর ময়না তদন্ত করেছে। এ
ছাড়া এজাহারকারী একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করলেও পুলিশ এজাহারের দেওয়া অভিযোগ কাটছাট করেছে অভিযোগ তুলে তিনি সঠিক তদন্তসহ ন্যায় বিচার দাবি করেন।
নিহতের মা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তার মেয়ে কোচিং থেকে অ্যাসাইনমেন্ট পেপার আনার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
দুপুর দেড়টার দিকে দিহান নামের ছেলেটি তাকে ফোন করে আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে অসুস্থ মেয়েটি রয়েছে বলে জানান।
“আমি সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানতে পারি মেয়েকে মৃতাবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।”
সে সময় সেখানে দিহান ছাড়াও আরও তিনজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পর ওরা মেয়ের বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করেছিল।
এ ঘটনা পুলিশকে জানানো হলে কলাবাগান জোনের সহকারী কমিশনার এসি আবুল হাসান বিকেল ৪টার দিকে সুরতহাল প্রতিবেদন করাসহ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ লাশ গ্রহণ করে।
“এ সময় সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা বয়স নিয়ে আমরা আপত্তি তুললে পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়ে লাশের ময়না তদন্ত ছাড়াই মর্গে ফেলে রাখে।”
তিনি তার মেয়ের বয়সের প্রমাণপত্র দেখালেও পুলিশ তাতে আমল দেয়নি বলে অভিযোগ করছেন তিনি।
তিনি বলেন, “পরদিন শুক্রবার বয়স প্রমাণের জন্য লাশ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পুলিশ।
“আমি আমার পরিচিতি বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্যে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানাই। বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়না তদন্ত শেষ করে আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।”
তিনি জানান, জন্মের পর ইস্যুকৃত টিকা কার্ড, স্কুল কার্ড এবং সর্বশেষ পাসপোর্টে তার মেয়ের জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৯ অক্টোবর লেখা আছে। সে হিসেবে মৃত্যুর সময় মেয়েটির বয়স হয় ১৭ বছর ৩ মাস।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে ১৯ বছর বয়স কোথায় পেলেন?”
প্রয়াত এ স্কুল ছাত্রীর মা ‘মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার’ দাবি করেন।
এদিকে, নিহতের বাবা বলেন, প্রথমে আমি দিহানসহ আরও তিনজনের নামোল্লেকসহ এজাহার দিলে পুলিশ তাদের আটক করে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর কলাবাগান থানা পুলিশ আমার দেওয়া এজাহার পরিবর্তন করে শুধুমাত্র দিহানকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করে।”
তিনি বলেন, “সে সময় পুলিশ আমাকে জানায় যেহেতু দিহানের বাসা থেকে ঘটনাটি ঘটেছে সেই কারণে শুধু দিহানকে আসামি করে মামলা করলে সঠিক বিচার হবে।
“কিন্তু চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে যতটুকু জানতে পেরেছি, মেয়ের উপর যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তাতে এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই একজন জড়িত নয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
দিহানকে রিমান্ডে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।