অর্ধযুগেও তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছেন মামলার বাদী অঞ্জলী রাণীর স্বামী রাজেন্দ্র চৌধুরী।
২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার তেলিপট্টি লেইন এলাকায় চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী রানীকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
হত্যাকাণ্ডের দিন বিকালে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন তার স্বামী ডা. রাজেন্দ্র চৌধুরী।
শুরুতে মামলাটি তদন্ত করছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আট বার বদল করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা।
আট কর্মকর্তার নিষ্ফল তদন্ত শেষে এক বছর আগে মামলা গেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছিল এ হত্যাকাণ্ডে চারজন অংশ নিয়েছিল। তবে তাদের শনাক্ত করা যায়নি ছয় বছরেও।
গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার সময় ২০১৫ সালের ১৩ জুন রাতে পটিয়া জামেয়া আল ইসলামীয়া মাদ্রাসার সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারও উদঘাটন করা যায়নি হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
এরপর বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার তিন জঙ্গি ও এসপিপত্নী মিতু হত্যাকাণ্ডে অস্ত্র সরবরাহ করা এহেতাশামুল হক ভোলাকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় গোয়েন্দা পুলিশ; কোনো চেষ্টাই আলোর মুখ দেখেনি।
তবে ‘পরিকল্পিত’ এই হত্যাকাণ্ডটি পেশাদার খুনিদের হাতে হয়েছিল বলে শুরু থেকেই ধারণা করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের মতো অবস্থায় আছে এ মামলা। নতুন কোনো অগ্রগতি নেই।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার মামলার বাদী রাজেন্দ্র চৌধুরী চট্টগ্রামে এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর মহামারী এবং অসুস্থ থাকায় আর আসতে পারেননি।
গোয়েন্দা পুলিশের আগের তদন্ত কর্মকর্তাদের মতো পিবিআই পরিদর্শক জাহিদেরও একই বক্তব্য হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ করছেন।
“হত্যাকাণ্ডে চারজন অংশ নিয়েছিল বলে প্রথম থেকেই নিশ্চিত হয়েছিল পুলিশ। তাদের শনাক্তে কাজ করছি,” বলেন তিনি।
মামলার তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অঞ্জলী রাণীর স্বামী রাজেন্দ্র চৌধুরী বলেন, “মামলা নিয়ে আর কিছুই বলার নেই। যে যাবার সে গেছে। কিন্তু কেন হল, কারা করল সেটা জানতে পারলে ভালো লাগত।
“বয়স ৬৬ পার হয়েছে। বেঁচে আছিতো আছি, চলে গেলে চলে গেলাম… প্রেশার ডায়বেটিসসহ আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। প্রতিবারই বলি, বেঁচে থাকতে দেখে যেতে পারলে শান্তি।”
তিনি বলেন, “মামলার বাদী আমি, আমার যদি কিছু হয়ে যায় মামলা ওখানেই শেষ। যতবার ডেকেছে ততবার গিয়েছি। প্রয়োজনীয় সব তথ্য ডিবিকে দেওয়া হয়েছে। ডিবিতে মামলা থাকাকালীন কমিশনারসহ তিন-চারজনের সাথেও বসেছি।”
আরও পড়ুন
মামলা ‘গুরুত্বপূর্ণ’, খবর নাই বছরেও
নার্সিং শিক্ষিকা অঞ্জলী হত্যার তদন্তে তিন বিষয়