যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনই পদত্যাগ না করেন তবে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার পথে অগ্রসর হবেন।
বিবিসি জানায়, আগামী সোমবার হাউজ ডেমোক্র্যাট থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতায় উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করা হবে।
তাদের অভিযোগ, গত বুধবার ক্যাপিটলে কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকরা যে তাণ্ডব চলায় তার উসকানিদাতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে। ওই সহিংসতায় এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক নারীসহ চার ট্রাম্পভক্ত নিহত হয়েছেন। নিহত নারী মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।
এ বিষয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কংগ্রেস।
‘‘তবে আমার মনে হয়, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার জন্য একদমই উপযুক্ত নন।”
এদিকে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে অভিশংসনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে। যদি সত্যিই অভিংশসন প্রস্তাব আনা হয় তবে তাতে আমাদের এই মহান দেশকে আরো বিভক্ত করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো লাভই হবে না।”
বিবিসি জানায়, কংগ্রেসম্যান ক্যালিফোর্নিয়ার টেড লিউ এবং রোড আইল্যান্ডের ডেভিড সিসিলাইন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করেছেন। ওই খসড়া প্রস্তাবে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মধ্যে প্রায় ১৬০ জন সই করেছেন।
গত বুধবার ক্যাপিটলে দাঙ্গার সময় লিউ এবং সিসিলাইন দুইজনই সেখানে অবস্থান করছিলেন।
যদি ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে সত্যিই অগ্রসর হন তবে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মত অভিশংসিত করার চেষ্টা হবে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে জিততে বিদেশি সহায়তা চাওয়ার অভিযোগে ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে একবার অভিশংসিত হয়েছেন; তবে তাকে তখন ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। সেনেট তাকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল।
এবারও অভিশংসনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা কতটা সফল হবে তা বলা মুশকিল।
কারণ, ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদই আছে আর মাত্র ১১ দিন। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেন। ওই দিন ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে এখনো রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ডেমোক্র্যাটিক নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পক্ষে রায় দিলে তাকে অপসারণের জন্য প্রস্তাব যাবে সেনেটে। সেনেটে ওই প্রস্তাব পাস হতে দুই তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সেনেটে যেটা হয়তো সম্ভব হবে না।
যদিও বুধবার ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব এবং ওই ঘটনায় ট্রাম্পের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে অনেক রিপাবলিকান নেতাই এখন ট্রাম্পের উপর মহাবিরক্ত।
রিপাবলিকান নেতা আলাস্কার সেনেটর লিসা মারকোভস্কি শুক্রবার স্থানীয় একটি দৈনিকে বলেন, ‘‘খুব সাধারণ ভাষায় ট্রাম্পকে এখন বের করে দেওয়া প্রয়োজন।”
ট্রাম্পের কড়া সমালোচক নিব্রাস্কার রিপাবলিকান সেনেটর বেন স্যাস বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই অভিশংসনের বিষয়টি বিবেচনা করবো।”
তারপরও ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে সেনেটে দুইতৃতীয়াংশ ভোট পাওয়ার আশা এখন পর্যন্ত নেই।
সেক্ষেত্রে বলা যায়, ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার এ উদ্যোগ হয়তো প্রতীকী। ট্রাম্পে এটা বোঝানো যে, কংগ্রেসে সহিংস কাণ্ডের যে উসকানি তিনি দিয়েছেন তার জবাব দিতে তিনি বাধ্য।
সেনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলের একজন সহযোগী জানান, যদি সবচেয়ে দ্রুত নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ থেকে উচ্চকক্ষ সেনেটে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার প্রস্তাব যায়, তাতেও সেটা ১৯ জানুয়ারির আগে সম্ভব না। অর্থাৎ, ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগে।
আর ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর সেনেটে তার বিচার সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।
ট্রাম্প যদি কংগ্রেসে অভিশংসিত হন এবং দোষীসাব্যস্ত হন তবে তিনি আর কখনো কোনো সরকারি অফিসে দায়িত্বপালন করতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এখন সরানো সম্ভব?