তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাসের টিকা নিতে চাইলে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে
হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “কোভাক্সের চিঠি শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছে। চিঠি আসার বিষয়টি
স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ কোভাক্সের এই টিকা নেবে
বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা,
গ্যাভি এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই)
নেতৃত্বে নভেল করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য কোভাক্স গড়ে উঠেছে।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী
টিকা দিতে কোভাক্সের এই চিঠি পাঠানোকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “কোভাক্সের এই চিঠি আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর। কোভাক্সের অঙ্গীকার অনুযায়ী
টিকা সরবরাহ শুরু হয়েছে বলা চলে। তারা অল্প করে হলেও সবাইকে সমানভাবে টিকা বিতরণ করবে
সেই নীতিমালা অনুযায়ী আমরা টিকা পাচ্ছি। কোভাক্স থেকে টিকা আসলে এর গুণাগুণ নিয়ে কোনো
প্রশ্ন থাকবে না।”
খুরশীদ আলম জানান,
৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের ১৯২টি সদস্য দেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির
শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে তাদের থেকে স্বল্প সংখ্যক টিকা দেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ
করা হয়েছে।
সদস্য দেশগুলো টিকা
নিতে আগ্রহী কি না, তা আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে কোভ্যাক্সকে জানাতে হবে। ১৯ থেকে ২৮
জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ বা গ্যাভি সংশ্লিষ্ট দেশের আগ্রহপত্র
ও অবকাঠামো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকা বিতরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত
করবে এবং সদস্য দেশগুলোকে জানিয়ে দেবে।
আগামী মে মাসের মধ্যে
এই টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে
ফাইজারের টিকার অনুমোদন করানোর শর্তের কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. খুরশীদ
আলম।
তিনি জানান, চিঠি পাওয়ার
পর শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা।
এই টিকা বাংলাদেশ নিতে
চায় জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা কোনোভাবেই এই সুযোগটি ছাড়তে
চাই না, আমরা ভ্যাকসিনটা নিতে চাই। আমরা বিষয়টি নিয়ে অলরেডি একটা হোমওয়ার্ক করে ফেলেছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনিও উনাকে (স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে)
মৌখিকভাবে বলেছেন এটার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে।”
তবে ফাইজারের টিকা
নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা মোকাবেলা করতে হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এই টিকা অনেক
ঠাণ্ডায়, মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য
ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বিতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টিকা রাখা যায়
এমন রেফ্রিজারেটর আছে।
“টিকাটি অনেক কম তাপমাত্রায়
সংরক্ষণ করতে হয়। এ কারণে সংরক্ষণ ও বিতরণ করা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।”
গত ২ ডিসেম্বর বিশ্বের
প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র
ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ধারণা থেকে বাস্তবে
রূপ নিতে মাত্র ১০ মাস সময় লাগায় ফাইজার-বায়োএনটেকের এ প্রতিষেধকটিকে বিশ্বে এখন পর্যন্ত
প্রচলিত সব টিকার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বানানো টিকা বলা হচ্ছে। দশককাল সময় নিয়ে
বানানো টিকাগুলোর মতোই এই টিকাও গবেষণার সব প্রয়োজনীয় ধাপ অতিক্রম করে।
চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালে
টিকাটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রতীয়মান হয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কোভাক্সের চিঠির বরাত
দিয়ে ডা. খুরশীদ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশকে মোট জনসংখ্যার শুন্য দশমিক ৪ শতাংশ
মানুষের জন্য এই টিকা দেওয়া দেওয়া হবে।
তবে কত ডোজ টিকা পাওয়া
যাবে তা এখনও জানা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জানার পর ওই পরিমাণ টিকা সংরক্ষণ
করা যাবে কি না বোঝা যাবে।
“ভলিউম কত হবে ডব্লিউএইচও
আমাদের কাল পর্যন্ত জানাতে পারেনি। জানার চেষ্টা করছি এটার ভলিউম কত হবে পারে। এই টিকার
একটা ডোজ শূন্য দশমিক ৩ মিলিলিটার (পয়েন্ট থ্রি এমএল)। যদি একটা ভায়ালের মধ্যে দশটা
ডোজ থাকে তাহলে তো ভলিউম খুব বেশি হওয়ার কথা না।
“তারপরও আমরা জানতে
চাচ্ছি থ্রি-এমএলের ভায়ালের সাইজ কত। আমাদের ক্যাপাসিটিতে কতটুকু আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে
কাজ করতে হবে। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিয়ে আসা বা সেগুলো নিয়ে যাওয়া। এই ভ্যাকসিন
দিতে হবে ঢাকা থেকে। ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
এবিএম খুরশীদ আলম জানান,
ফাইজারের টিকা যে তাপমাত্রায় বহন করতে হয় সেই ধরনের বাহন বাংলাদেশে নাই। এ কারণে সেগুলো
জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে।
“এটা বহনের ব্যাপার
কী হবে সেটাও আমরা জানি না। সেটাও আমরা জোগাড় করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমরা এখনও জানি
না কোথায় কোথায় এটা আছে।”
তিনি বলেন, ১৮ জানুয়ারির
মধ্যে কোভাক্সের চিঠির জবাব দিতে হবে। এ কারণে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে
শনিবার রাতে আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
কোভাক্সের শর্ত অনুযায়ী
এই টিকা করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সামনের সারিতে কাজ করা লোকজনকে দেওয়া হবে বলে
জানান ডা. খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, এ কারণে
এই টিকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে।
“তাদের কন্ডিশন অনুযায়ী
ফ্রন্টলাইনার ছাড়া আর কাউকে এই টিকা দেওয়া যাবে না। তাদের শর্ত আমরা মেনে নিচ্ছি, এই
টিকাগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে দিতে পারলে সেরাম থেকে যে টিকা পাচ্ছি তা অন্যদের
দিতে পারব।”
দেশের ১৪ কোটির বেশি
মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য ইতোমধ্যে ভারতের
সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি
হয়েছে। ওই টিকার জন্য এরইমধ্যে সেরাম ইনস্টিউটটকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এর বাইরে গ্যাভি বাংলাদেশকে
মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।