ক্যাটাগরি

মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ ইতিহাস পাঠে সহায়ক একটি গ্রন্থ

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তিলাভের জন্য স্বাধীনতাকামী লক্ষ কোটি প্রাণের আবেগ দুর্দমনীয় হয়ে উঠে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের অগ্নিগিরির রূপ লাভ করে ছড়িয়ে পড়েছিলো বাংলার শহরে ও গ্রামে। বছরটি ১৯৭১, সর্বস্তরের জনযোদ্ধাদের সম্মিলিত শপথে ও সংগ্রামে অপরাজেয় সময় একাত্তর। আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ সাধারণ কিষাণ-শ্রমিক-ছাত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাত্র নয় মাসে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছিল, কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সামগ্রিকভাবেই জনমানুষের যুদ্ধ-জনযুদ্ধ।

সালেক খোকন রচিত ‘অপরাজেয় একাত্তর’ গ্রন্থটির মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিস্তৃত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে একাত্তরের রণাঙ্গনের অদম্য বীর যোদ্ধাদের স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই সেই বর্ণনা যেমন জীবন্ত, তেমনি প্রেরণাদায়ী। আমাদের চরম শোক ও পরম গৌরবে মণ্ডিত মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে ব্রতী মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্ব সমরাঙ্গনের বীরত্বগাথা, নূতন জাতির আত্মপ্রকাশ এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষার এই আলেখ্য কিশোর-তরুণদের ইতিহাস সচেতন ও স্বদেশপ্রেমে দীক্ষিত করে তুলবে। একইসাথে যে কোনো বয়সী পাঠকের মনে উন্মেষ ঘটাবে দেশ ও মানুষের প্রতি প্রদীপ্ত অঙ্গীকার।

বইটি প্রকাশ করেছে ‘পেন্সিল পাবলিকেশনস’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন তৌহিন হাসান। বড়দের পাশাপাশি কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে সাবলীল ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাবে এ বই।

সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েজন গুণী মানুষ একক প্রচেষ্টায় গবেষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে মূর্ত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম লেখক ও গবেষক সালেক খোকন। নিভৃতচারী এ লেখক নিরলস প্রচেষ্টায় আমাদের গৌরব ও বেদনার মহান মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত মানুষের কথা তুলে আনার ব্রতী হয়েছেন, যাঁরা ছিলেন অন্তরালে।

‘অপরাজেয় একাত্তর’ বইটিতে একাত্তরের পদযাত্রা, নৌ-কমান্ডো শাহজাহান কবিরদের চাঁদপুর অপারেশন, প্যাটেলদের স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, গেরিলা মান্নানদের গ্রিনরোড অপারেশন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শাহজাহানের প্রথম ওয়ারল্যাস ম্যাসেজ, বীরবিক্রম নূরুন্নবী খানের রণাঙ্গনের গদ্য, রুহুল আহম্মদ বাবুর যুদ্ধদিনের গদ্য, রুস্তম আলীদের প্রথম এয়ার অ্যাটাক, ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ একাত্তরের দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, কাশেম মোল্লার অস্ত্র ছিল রেডিও, সমাজ তখন বিশ্বাসই করেনি নারীরা যুদ্ধ করতে পারে, খ্রিস্টফার মুর্মূ ও ভদ্র ম্রংয়ের একাত্তর, পায়ের রগগুলো শিকড়ের মতো ঝুলছিল জুলফিকারে, ঢাকায় নান্টুদের গেরিলা অপারেশন- এমন শিরোনামে একাত্তরের ঊনিশটি বীরত্বের ইতিহাস দুর্লভ আলোকচিত্রসহ তুলে ধরা হয়েছে।

লেখাগুলোয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, সে সময়কার সাধারণ মানুষের মনোভাব, পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকারদের অত্যাচারের চিত্র, যুদ্ধের বিভীষিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তাক্ত ইতিহাস ও স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরের দেশ নিয়ে তাঁদের ভাবনাগুলো। প্রায় প্রত্যেকটি লেখায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা অকাট্য আশা ব্যক্ত করেছেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি। দেশ নিয়ে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের কথাগুলোও বলেছেন প্রজন্মের উদ্দেশেই। যা উপস্থাপন করা হয়েছে সরল গদ্যে, একেবারে গল্পের মতো করে।

সালেক খোকন তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কাজে যুক্ত রয়েছেন প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় থেকে। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত বিভাগে। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক’ পুরস্কার পায়।

সালেক খোকনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২২। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘১৯৭১: রক্ত’, ‘মাটি ও বীরের গদ্য’, ‘১৯৭১: যাঁদের ত্যাগে এলো স্বাধীনতা’, ‘রক্তে রাঙা একাত্তর’, ‘১৯৭১: রক্তমাখা যুদ্ধকথা’, ‘যুদ্ধাহতের ভাষ্য’, ‘১৯৭১: যাদের ত্যাগে এলো স্বাধীনতা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

বইটির প্রকাশক ‘পেন্সিল পাবলিকেশনস’ বাংলা, বাঙালি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী খুবই সন্নিকটে। তাই তারা বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালির ইতিহাসকে কেন্দ্র করে একাধিক বই প্রকাশ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘অপরাজেয় একাত্তর’ বইটি প্রকাশ করেছে। বইটির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় কয়েকটি যুদ্ধের নির্মোহ ইতিহাস ওঠে এসেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ানে।

১৫২ পৃষ্ঠার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ বইটির মলাট মূল্য ৩৫০ টাকা। আমরা প্রত্যাশা করি, এ বইয়ের মাধ্যমে পাঠক মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ ইতিহাস পাঠে সক্ষম হবেন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!