শনিবার নগরীর রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী
আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত
মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা
দাশগুপ্ত বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি
কিছু দুষ্কৃতিকারী দুঃসাহস দেখিয়ে বুলডোজার দিয়ে আঘাত করেছে। বাড়িটি ১৯৭২ সালে
অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে এক ব্যক্তি সেই জায়গা লিজ
নিয়ে প্রথমে বাংলা কলেজ, পরে শিশুবাগ স্কুল পরিচালনা করছিলেন।
“একটি দখলদার চক্র জাল দলিল-দস্তাবেজ বানিয়ে
সেই জায়গায় প্রবেশ করেছে। স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের, শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। অথচ পুলিশ ছিল
নির্বিকার। পুলিশ দখলদারকে সহযোগিতা করেছে। আমরা পুলিশের এই ভূমিকার সঠিক তদন্ত
দাবি করছি।’’
মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর
রানা দাশগুপ্ত বলেন, দখলদার ব্যক্তি বলেছেন- তিনি যাত্রামোহন
সেনগুপ্তের উত্তরাধিকার মিলন সেনগুপ্তের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। এই জমির
বাজারমূল্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। যদি মিলন সেনগুপ্ত ৩৮ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পর্ণকুটিরে থাকেন কেন?
আন্দোলনকারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ
করে তিনি বলেন, “আমাকে অনেকে বলেছেন, এলাকার কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া
হয়েছে। পরে নাকি তিনি দ্বিমুখী আচরণ করছেন। আমি বলেছি- সেদিন যদি সুমন আমার পাশে
না থাকতো,
তাহলে আমার পক্ষে একা এই বাড়ি ভাঙচুর ঠেকানো সম্ভব ছিল না।”
তিনি বলেন, “কোনো ব্যক্তি স্বার্থে আমি আদালত ভবন রক্ষার লড়াই সেদিন করিনি। বিবেকের তাগিদে
করেছিলাম। এখনও বলছি, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই
বাড়িটিতে আমি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব।”
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “বাড়িটিকে জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারি সুষ্পষ্ট
সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা চাই। না হলে ১৮ জানুয়ারির পর এই বাড়ির সামনে আমরা আমরণ অনশনে
বসব। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে কিছু দখলবাজ ছাড়া চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকরা
আছেন। কেউ পাশে না থাকলেও আমি একাই আমৃত্যু অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
সমাবেশে সংহতি জানান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী
লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম
নাছির উদ্দীন।
নাছির বলেন, “এই জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি। আমরা সবাই জানি, অর্পিত সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। তাহলে এটা কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় গেল? এই জায়গার কেয়ারটেকার জেলা প্রশাসন। আমাকে জেলা প্রশাসক
নিজে বলেছেন, জায়গাটি বিক্রি করা কিংবা দখল বুঝিয়ে দেওয়ার
বিষয়ে উনি কিছুই জানতেন না। এখানেই আসল রহস্য। তাহলে এখানে পুলিশ কীভাবে এল? মনে হচ্ছে কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে এই সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা
হচ্ছে।”
এই বাড়ি ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ উল্লেখ করে তিনি
বলেন,
“যারা এই বাড়ি ভাঙচুর করেছে আমি তাদের ধিক্কার
জানাই। বাড়িটি রক্ষায় যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, আমি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
হিসেবে সব সময় এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকব।”
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা
পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও শ্যামল কান্তি পালিতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও
বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিনবোধি ভিক্ষু ও রনজিৎ কুমার দে, জাসদনেতা ইন্দু নন্দন দত্ত, আইনজীবী রুবেল পাল, চন্দন তালুকদার, অশোক কুমার দাশ, অনুপম
চক্রবর্তী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব পর্যন্ত
বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।