ক্যাটাগরি

অভাব-অভিযোগ জানাতে নগরবাসী পেল ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ

ঘরে বসে এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ জানিয়ে করপোরেশনের সেবা নিতে পারবেন। এসব সেবার মধ্যে থাকবে মশা নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক বাতি, রাস্তা-ঘাট ও নালা-খাল দখলমুক্তকরণসহ অবৈধ স্থাপনা সরানো, জলাবদ্ধতা ‍দূরীকরণ, নিকটস্থ পাবলিক টয়লেট খোঁজা, নারী ও শিশু সমস্যা সমাধান ইত্যাদি।

রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে বলেন, “আজকে দুই সিটিতেই যোগ্য মেয়র কাজ করছে। এই করোনাকালীন সময়েও খাল-নালা ব্যবস্থাপনা ও মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা একসাথে কাজ করেছি। গত বছর অনেক মানুষের ডেঙ্গু হয়েছে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ম্যাথডিকেল প্রসেস আমলে নিয়ে মশা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন মশা নিয়ন্ত্রণে বা কোথাও মশার উপদ্রব বাড়লে এই অ্যাপের মাধ্যমে সমস্যা জানামাত্রই সিটি কর্পোরেশনের লোকজন তা দমনে কাজ করতে পারবে।

“সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা খাল, নালা দখলমুক্তকরণ ও দৃষ্টিনন্দন শহর গড়ার কাজ করছি। শত শত হাতিরঝিল ঢাকা শহরে তৈরি হবে। ঢাকা ইকোলজিক্যাল মনোরম সিটি। বিদেশিরা আসবে বাংলাদেশ দেখতে।”

‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ সম্পর্কে তথ্য ও প্রযুক্তি জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রতিনিয়ত আমাদের সঙ্গে  বিভিন্ন আইডিয়া শেয়ার করছেন। তারই অংশ হিসেবে নাগরিক সমস্যা সমাধানের জন্য এই ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ। “এটি একটি ডাইনামিক অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপলিকেশনের ডেটা স্টোরেজের জন্য ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ‘স্মার্ট সিটি’ করার পরিকল্পনা তুলে ধরে পলক বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটির প্রতিটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাকে আমরা ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যারে নিয়ে আসব। এতে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ডেটা সংরক্ষিত থাকবে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা সিটি কর্পোরেশনে ক্যামেরার নজরে আসামাত্রই কন্ট্রোলরুমে এলার্ট হবে। পাশাপাশি আমরা পুলিশের ডেটা স্টোরেজের সঙ্গে সেটি ইন্টিগ্রেট করে দেব। এতে করে আমরা একটি সেইফ, স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে পারব।”

অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “প্রত্যাবর্তন দিবসে জাতির জনক আগে তার সহধর্মিনীকে দেখার জন্য বাসায় যাননি। উনি সোজা চলে আসছিলেন রেইসকোর্স ময়দানে, তার সহধর্মিনী সেটি রেডিওতে শুনছিলেন। তিনি কীভাবে দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, আর আমরা সেটি অনুসরণ না করে কীভাবে রাস্তা-ঘাট, নদী, নালা, খাল সব দখল করে নিচ্ছি।

“আমি একটি মেসেজ দিতে চাই, যারা অবৈধভাবে খালের দুই পাশ দখল করেছেন, অবৈধভাবে যারা রাস্তা দখল করেছেন, নিজেদের উদ্যোগে সরে যান। অবৈধদের জন্য আমরা কোনো বৈধ চিঠি পাঠাব না। আজকে অবৈধরা কেন যেন শক্তিশালী হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেভাবে জিরো টলারেন্স, সেভাবে উত্তর সিটিতে কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।”

নগরবাসীর জন্য ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ উপহার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই অ্যাপ নাগরিক ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্য সংযোগ তৈরি করবে। নাগরিকরা এই অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের সমস্যা জানাতে পারবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন সাড়া দেবে। আমরা মনে করি, এই অ্যাপ আমাদের জবাবদিহিতা ও দ্বায়িত্বানুভূতির জায়গা সুদৃঢ় হবে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার মাহমুদ, উত্তর সিটির কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ও প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম।