ক্যাটাগরি

ইলন মাস্ক: হয়রানির শিকার থেকে সম্পদে শীর্ষে

মাস্কের জন্ম ১৯৭১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। বয়স দশ বছর পার না হতেই ভেঙে যায় বাবা-মা’র সংসার। মা পেশায় ছিলেন মডেল, আর বাবা ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা তড়িৎযন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী। পাশাপাশি তার ছিলো স্থাবর সম্পত্তির উন্নয়ন ও কেনাবেচার ব্যবসা। শুরু থেকেই মাস্কের আগ্রহ ছিল কম্পিউটারের দিকে, নিজে নিজেই শিখেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।

স্কুলে খুব বাজেভাবে সহপাঠীদের হয়রানির শিকার হতে হতো মাস্ককে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, মাস্ককে একবার সিঁড়ির উপর থেকে ছুড়ে ফেলেছিলো একদল সহপাঠী। ওই ঘটনার পরে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল তাকে। যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেছিলেন মাস্ক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবেই দেখতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন মাস্ক। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভানিয়া। ওই সময়টিতে সিলিকন ভ্যালিতে ‘ইন্টার্ন’ বা শিক্ষানবীশ হিসেবেও কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল মাস্কের। কিন্তু ইন্টারনেট স্টার্টআপ জগতে পা রাখার লক্ষ্যে কর্মসূচীতে যোগ দেওয়ার দুই দিনের মধ্যেই প্রথম সারির এই বিদ্যায়তনকে বিদায় জানান মাস্ক।

প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোতে ব্যবসা শুরু করেন মাস্ক। ভাই কিমবালের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান জিপ২। শুরুতে এতো সহজে সাফল্য পাননি। ১৯৯৫ সালে ব্যবসা শুরু করার পর অফিসে ঘুমাতে হয়েছে মাস্ককে, কারণ বাসা ভাড়া নেওয়ার মতো অর্থ ছিল না তার হাতে। ১৯৯৯ সালে তার প্রতিষ্ঠানকে কিনে নেয় কমপ্যাক। মালিকানা হাতবদল বাবদ মাস্কের হাতে আসে দুই কোটি ২০ লাখ ডলার। 

মাস্ককে আজকের অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে অনলাইনে আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পেইপাল। ১৯৯৯ সালে ডিজিটাল অর্থ লেনদেন সেবাদাতা এক্স ডটকম প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরে তা কনফিনিটি নামের এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলে আসে। ২০০১ সালে এ প্রতিষ্ঠানটিরই নাম পরিবর্তন করে পেইপাল রাখা হয়। গোটা বিশ্বে ডিজিটাল লেনদেন প্রশ্নে নেতৃত্বাধীন অবস্থানে চলে আসে পেইপাল। ২০০২ সালে পেইপাল’কে ১৫০ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় ইবে। ওই চুক্তি থেকে মাস্কের হাতে আসে সাড়ে ১৬ কোটি ডলারের মতো।

মহাকাশ নিয়ে বরাবরই আগ্রহ ছিল মাস্কের। আর তাই দশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। ওই সময়টিতে সস্তা এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান তৈরিতে মনোযোগ দেন মাস্ক। সময়ের সঙ্গে এ খাতেও সাফল্যের দেখা পান। ২০২০ সালে এসে মহাকাশে মানব নভোচারী নিয়ে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখায় স্পেসএক্স।

টেসলা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। কিন্তু ওই সময় মাস্ক পুরো প্রকল্পটির সঙ্গে ছিলেন না। পরবর্তীতে তিনি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। মাস্কের বিনিয়োগ ও কৌশল ৬০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যমানের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

টেসলার এই উন্নতি অবশ্য সাম্প্রতিক। গত কয়েক মাসে টেসলার বাজার দর বেড়ে ২০ হাজার পাঁচশ’ কোটি ডলারে এসে দাঁড়ায়। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি নির্মাতা হিসেবে নতুন খেতাব পায় প্রতিষ্ঠানটি।

টেসলা মালিকানার প্রায় ২০ শতাংশের মতো রয়েছে মাস্কের হাতে। ওই ২০ শতাংশই তাকে নিয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর অবস্থানে।

মাস্কের ব্যক্তিজীবনও অনেক বৈচিত্র্যময়। আর দশজন গতানুগতিক প্রধান নির্বাহীর মতো নয়। ২০১৮ সালে এক পডকাস্টে ক্যামেরার সামনে গাঁজা টেনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। ওই সময় পুরো ঘটনাটি প্রভাব ফেলেছিল টেসলার শেয়ার দরে।

এ ছাড়াও গুহায় আটকে পড়া থাই স্কুল শিশুদের উদ্ধারে সাবমেরিন বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মাস্ক। এক উদ্ধারকর্মী তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের পর তাকে শিশু যৌন নিপীড়ক আখ্যা দিয়ে মানহানি মামলার কবলে পড়েছিলেন তিনি। করোনাভাইরাস লকডাউন চলাকালে ক্যালিফোর্নিয়ার নিয়ম ভেঙে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন মাস্ক। কারখানা খোলা রাখতে না দিলে অন্য কোথাও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।