আগে কয়েক
দফা তাগাদা দেওয়ার
পর সর্বশেষ নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই নয় জিএমকে
নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার সুযোগ
করে দিতে বর্তমান কর্মস্থল
হতে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা
পরিচালকদের (এমডি) চিঠি দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি
আকর্ষণ করলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম
রুহুল আজাদ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটার পর একটা অজুহাত
দেখাচ্ছে তারা। পরিচালনা পর্ষদকে ম্যানেজ করে প্রথমে করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখানো হয়েছিল। তারপর ইয়ার এন্ডিংয়ের (বছর শেষ) অজুহাত।
“সবশেষ
আমরা মন্ত্রণালয় থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নতুন কর্মস্থালে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। এরপরও যদি তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আদেশ না মানে, তাহলে
অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।”
রুহুল
আজাদ বলেন, “একটা বিষয় সবার মনে রাখতে হবে, মন্ত্রণালয়ের আদেশ মানে সরকারের আদেশ। এ আদেশ এড়িয়ে
যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
সোনালী,
অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংক-
এই ছয়টি ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি
ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকসহ
১১টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
রয়েছে দেশে, যেগুলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত।
রাষ্ট্রায়ত্ত
ব্যাংকের জনবল কাঠামো অনুযায়ী,
এমডি ও ডিএমডির পরই জিএমদের অবস্থান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকেই জিএমদের নিয়োগ-বদলির আদেশ হয়।
বদলি
হওয়া জিএমদের মধ্যে মাসফিউল বারী, মো. হাবিবুর রহমান গাজী ও মো. মাহবুবুর
রহমান জনতা ব্যাংকে এবং কাজী আবদুর রহমান, আ. রহিম, শওকত
আলী খান ও গোলাম মরতুজা
রূপালী ব্যাংকের।
বাকি
দুজনের মধ্যে কামিল বুরহান ফিরদৌস বিডিবিএল এবং মনিরুল
ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের জিএম হিসেবে কাজ করে আসছেন।
২০১৯
সালের ৯ ডিসেম্বর অর্থ
মন্ত্রণালয়ের আর্থিক
প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক আদেশে এই
নয় জিএমকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিশেষায়িত ব্যাংকে বদলি করা হয়।
তাদের
মধ্যে রূপালী ব্যাংকের তিনজন এবং জনতা ব্যাংকের দুজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বদলি করা হয়। বাকি চারজনকে বদলি করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি
উন্নয়ন ব্যাংক ও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকে।
কিন্তু
১১ মাসেও তারা নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে গত
বছরের ১১ নভেম্বর এক
আদেশে তাদেরকে দ্রুত নতুন ব্যাংকে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপরও
তারা নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে ১৯
ডিসেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আরেকটি আদেশ জারি করা হয়। এবারের আদেশটি জারি করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের
এমডিদের জন্য।
সেখানে
বলা হয়, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর এই
নয় জিএমকে বদলির আদেশ হওয়ার পর এমডিদের
অনুরোধে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা কার্যকর
করার সময় দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারপরও জিএমরা
নতুন কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় তাগাদাপত্র দেওয়া হয়।
নয়
জিএম নতুন কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলা উল্লেখ করা হয় সেই চিঠিতে।
সেখানে বলা
হয়, “এ অবস্থায়,
২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বদলি
করা নয় জিএমকে ২০২১ সালের প্রথম সপ্তাহের
মধ্যে বদলিকৃত ব্যাংকে যোগদানের জন্য বর্তমান ব্যাংক থেকে অব্যাহতি দানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকেও সর্বশেষ আদেশের একটি অনুলিপি পাঠানো হয়। কিন্তু রোববার পর্যন্ত কোনো জিএম তাদের নতুন ব্যাংকে যোগ দেননি।
জনতা
ব্যাংক তাদের তিন জিএমকে কেন এখনও ছাড়েনি জানতে চাইলে
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
আব্দুছ ছালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই তিন কর্মকর্তা
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাদের খুবই প্রয়োজন। ব্যাংক তাদের ছাড়তে চায় না।
“বিষয়টি
নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভায় আগেও আলোচনা হয়েছে। সামনের সভাতেও আলোচনা হবে। সেই সভায় তাদের রাখার বিষয়ে রেজুলেশনসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ জানাবো হবে। আশা করছি মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দেবেন।”
এদিকে বদলির
আদেশের পরও কর্মকর্তা না পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি
ব্যাংক আছে বেকায়দায়। এই ব্যাংকের ১৭টি
জিএম পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন সাতজন। ১৯৮৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই অচলাবস্থা তৈরি
হয়েছে।
নয়জন জিএম
এর মধ্যে পাঁচজনকে বদলি করে বাংলাদেশ কৃষি
ব্যাংকেই পাঠিয়েছিল সরকার।
কিন্তু রোববার পর্যন্ত তাদের একজনও যোগ দেননি বলে জানান বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া।
বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রেষণে নিয়োগ দিলেও বাস্তবে জিএম আমরা পাইনি। রোববার পর্যন্ত তারা কেউ জয়েন করেননি।”
রূপালী
ব্যাংক থেকে কর্মসংস্থান ব্যাংকে বদলির আদেশ পাওয়া জিএম কাজী আব্দুর রহমানের কাছে নতুন কর্মস্থলে না যাওয়ার
কারণ জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে তিনি বলেন, “হেড অফিস থেকে আমাকে এখনও রিলিজ অর্ডার দেওয়া হয়নি। তাই কর্মসংস্থান ব্যাংকে জয়েন করিনি।”
এ বিষয়ে কথা
বলতে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের মোবাইল
ফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া
যায়।
ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার (এমডি) অসুস্থ। কিছুদিন আগে ডেঙ্গু হয়েছিল। সে কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছেন না।”
তবে রূপালী
ব্যাংক থেকে বদলি করা চার জিএমের সবাই এখনও রূপালীতেই কাজ করছেন। কেউ নতুন কর্মস্থলে যাননি বলে জানিয়েছেন
ওই কর্মকর্তা।