আসামির জামিনের আবেদন শুনে রোববার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ
বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান তা খারিজ করে
দেন।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে এই মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলো। ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় জামিনের আবেদন খারিজ করেন আদালত।
দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই মামলাটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা এ নিয়ে চতুর্থবারের মত পেছালো।
রোববার শুনানির সময় প্রদীপ কুমার দাশকে আদালতে হাজির করা হয়।
এরআগে প্রথমবার ১৩ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন তা জমা দেয়নি দুদক। তখন ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদালত। সেদিন প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
তারআগে ২০ সেপ্টেম্বর আদালত ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটির এজাহারে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।
দুদক এর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রদীপ কুমার দাশের করা জামিন আবেদনও নামঞ্জুর করা হয়েছিল সেদিন।
দুদকের করা মামলার এজাহারে, নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ
‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণ কর্তৃক অর্জিত বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
আয়কর রির্টানে আসামি চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্যেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে দুদক।
এই মামলার আরেক আসামি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক আছেন।
এরআগে ১৪ সেপ্টেম্বর টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রামে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ২৩ অগাস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকি কারণকেও আসামি করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২)
ও ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২)
ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
মামলা হওয়ার পর ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ অগাস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর প্রদীপকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রদীপ এবং কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে।
সবশেষ ১৩ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া ক্যাম্পের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে আসামি করে কক্সবাজারের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব।
এতে বলা হয়,
প্রদীপ কুমার দাশের ‘ইয়াবা কারবারের খবর জেনে যাওয়ায়’ পরিকল্পিতভাবে ওই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়।
আরও পড়ুন
ওসি প্রদীপ কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে
ওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
চট্টগ্রামে দুদকের মামলায় ওসি প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখানো হল
ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ
স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা ফোন কলের অনুমতি পেল না ওসি প্রদীপ
অবৈধ সম্পদ: ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন জমা ফের পেছাল
প্রদীপের ‘ইয়াবা বাণিজ্যের খবর জেনে যাওয়ায়’ সিনহাকে হত্যা: র্যাব
অবৈধ সম্পদ: ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ফের পিছিয়েছে