ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন নিরাপত্তা কমিটির প্রধান সুরিয়ান্ত তাইয়োনো বলেন, ‘‘আমরা সমুদ্রের গভীরে ব্ল্যাকবক্সগুলোর অবস্থান শনাক্ত করেছি। দুটিই পেয়েছি।”
“এখন ডুবরিরা সেগুলোর উদ্ধারের কাজ শুরু করবেন। আশা করি সেগুলো উদ্ধারে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।”
শনিবার স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটায় জাকার্তা থেকে ৬২ জন আরোহী নিয়ে শ্রীবিজয়া এয়ারের বোয়িং ৭৩৭-৫০০ উড়োজাহাজটি পশ্চিম কালিমান্তান প্রদেশের রাজধানী পনতিয়ানাকের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল, কিন্তু উড্ডয়নের চার মিনিট পরই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পরিবহন মন্ত্রী বুদি কারিয়া জানান, বিমানবন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লাকি দ্বীপের কাছে সাগরে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে উড়োজাহাজটি নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর রওনা হয়েছিল। জাকার্তা থেকে রওয়ানা হওয়ার পরপরই সেটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জেলেরা সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় উড়োজাহাজের কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। আস্তে আস্তে মানবদেহের খণ্ডাংশসহ উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ এবং আরোহীদের জিনিসপত্র পানিতে ভেসে উঠতে শুরু করে।
বিবিসি’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি জনাথন হেড জানান, শ্রীবিজয়ার উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে সমুদ্র অপেক্ষাকৃত অগভীর। বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুরুতে উদ্ধার অভিযানে অসুবিধা হচ্ছিল। এখন আবহাওয়াও কিছুটা ভালো হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াহিউদ্দিন আরিফ আইনিউজকে জানিয়েছেন, তারা উড়োজাহাজের কাঠামোর টুকরা পেয়েছেন যেটি প্রায় এক মিটার লম্বা, পাশাপাশি চাকা, টায়ারের টুকরা ও মানব দেহের অঙ্গও পেয়েছেন।
জাকার্তা পুলিশের মুখপাত্র ইউসিরি ইউনুস জানিয়েছেন, তল্লাশি ও উদ্ধার সংস্থা থেকে দুটি ব্যাগ তারা গ্রহণ করেছেন। প্রথম ব্যাগে যাত্রীদের জিনিসপত্র ও অপর ব্যাগে মানব দেহের অঙ্গ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “এসব জিনিস শনাক্ত করতে কাজ করছি আমরা।”
বৈরী আবহাওয়ার কারণে শনিবার রাতে উদ্ধার অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। রোববার ভোর আবার অভিযান শুরু হয়। চারটি উড়োজাহাজ উদ্ধার অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে।
শ্রীবিজয়ার অভ্যন্তরীন ওই ফ্লাইটে ১২জন ক্রুসহ মোট ৬২ জন আরোহী ছিলেন, তাদের কারও আর বেঁচে থাকা আশা নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আরোহীদের সবাই ইন্দোনেশীয় নাগরিক বলে দেশটির ট্রান্সপোর্ট সেইফটি কমিটি জানিয়েছে।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি ২৭ বছরের পুরনো একটি বোয়িং ৭৩৭-৫০০।
উড়োজাহাজটির আরোহীদের উদ্বিগ্ন, বিপর্যস্ত স্বজনরা জাকার্তা থেকে প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার দূরে পনতিয়ানাকে অপেক্ষা করছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
তাদের একজন ইয়ামান জাই। কান্নাজিড়ত কণ্ঠে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওই ফ্লাইটে আমার পরিবারের চার সদস্য ছিলেন। আমার স্ত্রী এবং তিন সন্তান। আমার স্ত্রী আজ আমার বাচ্চার একটি ছবি আমাকে পাঠিয়েছিল… আমার হৃদয় কী টুকরো টুকরো হয়ে যাবে না?”