রোববার সকালে এক নির্বাচনী পথসভায় তিনি বড় ভাইকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে জিততে হলে তাকে লাগবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জা এবার নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওবায়দুল কাদের কোম্পানীগঞ্জ আসনেরই সংসদ সদস্য।
কাদের মির্জার অভিযোগ, এবার নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার বিরোধিতা করছে।
রোববার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পথসভায় তিনি বলেন, “তার (ওবায়দুল কাদের) উপরও আমার ক্ষোভ আছে। এখানে জিততে হলে তার আমাদের লাগবে। সামনে জিততে হলে উনাকেও সতর্ক হতে হবে।
“এত সহজ নয়, কঠিন ব্যাপার। বউ-টউ (স্ত্রী) সামলাতে হবে। আর উনার সঙ্গে যারা হাঁটেন, তারা কার থেকে মাসোহারা পান, তার খোঁজখবর নিতে হবে।”
সম্প্রতি আরেক পথসভায় কাদের মির্জা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্যও হারবেন।
তার ওই বক্তব্যকে জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির উদাহরণ হিসেবে বিএনপি নেতারা তুলে ধরলে ওবায়দুল কাদের ভাইকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ওবায়দুল কাদেরের ভাই মির্জা বললেন, তার কথার ‘বিকৃত প্রচার হচ্ছে’
শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে ছাড় নয়, ভাইয়ের প্রসঙ্গে কাদের
বসুরহাটে এক নির্বাচনী বৈঠকে আবদুল কাদের মির্জা (ছবি: ফেইসবুক)
কাদের মির্জা বলেন, “শুনেন, ওবায়দুল কাদের আমার লগে নাই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমার সাথে নাই। নোয়াখালী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র পাঠাইছে। ফেনীর আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র পাঠাইছে। কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ আমার সাথে নাই।”
নোয়াখালীর আঞ্চলিক উচ্চারণে পথসভায় উপস্থিত জনতাকে তিনি প্রশ্ন করেন “আমনেরা কি আঁর লগে থাইকবেননি?”
এই সময় উপস্থিত জনতা ‘হ্যাঁ’ বললে কাদের মির্জা বলেন, “আমনেরা আঁর লগে থাকলে কথা কমু, নয় কইতাম ন। [আপনারা কি আমার সঙ্গে থাকবেন? আপনারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি কথা বলল, না হয় বলব না।]
দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এরা আমার সাথে নাই কেউ। বসুরহাটের এরা, আমাদের উপজেলার, এরা ওবায়দুল কাদেররে ডরায়। একরাম চৌধুরীকে (নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য) ডরায়। তারপরে ওই যে নিজাম হাজারীরে (ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য) ডরায়। এইটা হলো মূল ঘটনা।”
আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে ভোটের প্রচারে ‘বাধা পাচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেন বর্তমান এই মেয়র।
“আমার পোস্টার বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়েছে। এটা জামায়াত-বিএনপির কেউ ছিঁড়েনি। ছিঁড়েছে নোয়াখালী, ফেনী থেকে আন্ডুগান্ডুদের অস্ত্র দিয়ে লাগিয়েছে, ওড়া ছিঁড়ছে। কীজন্য ছিঁড়ছে? আমাদের কর্মীদের গরম করার জন্য।
“কালকে যুব মহিলা লীগের এক মহিলা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা মোবাইল ট্র্যাকিং দিয়ে সব তথ্য পেয়েছে, কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তথ্য সব পাবার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি? তাহলে এ মহিলার হাতটা অনেক শক্তিশালী। না হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন?”
আবদুল কাদের মির্জা
নিজেকে ‘অভিভাবকহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে এজন্য ভাইকে দায়ী করে তিনি বলেন, “ঢাকায় ভর্তি হতে গিয়েছি, বলেন চট্টগ্রামে ভর্তি হও। ঢাকায় রাজনীতি করলে আবার সেখানে কোনো বড় নেতা হয়ে যাই কি না! সত্যি বলছি। উনিই তো এগোতে দেননি। আমাদের কি কোনো অভিভাবক আছে?”
পথসভায় কাদের মির্জা সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সেরও সমালোচনা করেন।
“ঢাকা ইউনিভার্সিটির নুরা পাগলার সাথে আপনারা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক তার সাথে বের হয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটার বিরোধিতা করেছেন; আহারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি! আহারে বাম দল! এটা কি আপনাদের রাজনীতি?”
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমায় একটা জায়গায় নিয়ে ঠেকায়, সেটা হলো ওবায়দুল কাদের সাহেব অসুস্থ। এটা বললে আমি দুর্বল হয়ে যাই। তারপরও উনার বোঝা উচিৎ, উনি জাতীয় নেতা। আল্লাহ উনাকে সম্মান দিয়েছে, আওয়ামী লীগের দুবারের সাধারণ সম্পাদক। উনার বোঝা উচিৎ।”
কাদের মির্জা বলেন, “আমেরিকায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে আমার দুটি টিউমার ধরা পড়েছে। তখন সেখানে আমি ২৪ দিন ঘরে ছিলাম। ঘরে বসে আমার অনুভূতিতে আঘাত করেছে, আমরা কী করছি?
“তাই বিমানবন্দরে এসে ঘোষণা করেছি, এখন থেকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। সত্য কথা বলব। তাই এই নির্বাচনকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এটা হলো সত্য কথা। নির্বাচন আমার কাছে মুখ্য নয়।”
ভাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।