সোমবার এই চেষ্টায় কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে দুটো প্রস্তাব উত্থাপন করেছে তারা।
দুই প্রস্তাবেরই লক্ষ্য ২০ জানুয়ারিতে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ট্রাম্পকে সরানো।
বিবিসি জানায়, দুই প্রস্তাবের একটি হচ্ছে, ২৫ তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরোনোর প্রস্তাব এবং অপরটি হচ্ছে অভিশংসন প্রস্তাব।
প্রথম প্রস্তাবে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ২৫ তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
আর পেন্স যদি এই পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সরানোর জন্য উত্থাপন করা হয়েছে অভিশংসন প্রস্তাব।
যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহের সহিংসতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকার জন্য তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ডেমোক্র্যাটরা।
এ প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বিরোধিতায় উসকানি’ দেওয়া এবং ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতা উস্কে দিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়াও, অভিশংসন প্রস্তাবে নির্বাচনে জয়ের ট্রাম্পের দাবিসহ আরও কয়েকটি ভুয়া দাবির উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তাবগুলো নিয়ে অগ্রসর হতে ডেমোক্র্যাটদের গোটা কক্ষেই সর্বসম্মতির প্রয়োজন। কিন্তু তাদের এ চেষ্টায় বাধ সেধেছেন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এক রিপাবলিকান।
এতে হাউজে বিতর্ক এবং মঙ্গলবার ভোটাভুটি অনুষ্ঠানের পট প্রস্তুত হয়েছে।
ট্রাম্পকে সরাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কোনও উদ্যোগ না নিলে প্রতিনিধি পরিষদ বুধবার অভিশংসন প্রস্তাব (আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্ট) নিয়ে বিতর্ক শুরু করবে।
অভিশংসন বিলের সমর্থকরা বলছেন, বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে এ প্রস্তাব পাসের জন্য যথেষ্ট ভোট তাদের এরই মধ্যেই আছে।
ট্রাম্প এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হলে তাকে রাজনৈতিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতে সেনেটে তার বিচার করা হবে।
যদিও ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, সেই বিচার হয়ত চটজলদি নাও হতে পারে। কারণ, মহামারী এবং এ সংক্রান্ত আরও কিছু গুরুতর ইস্যুতে সেনেট চাপের মুখে আছে, যেগুলোতে বাইডেনকে প্রেসিডেন্সি শুরুর প্রথম মাসেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
যু্ক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে গত বুধবারের হামলার পর থেকেই দেশের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রাম্পকে আর এক মুর্হর্তও ক্ষমতায় না রাখার ডাক জোরদার হয়েছে।
ওইদিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলার সময় ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা বিশ্ব। ডেমোক্র্যাটরাসহ আরও অনেকেই বলছে, ট্রাম্পের উস্কানিতেই হামলা হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা ওইদিনই সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে চিঠি দেন। হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা না নিলে অভিশংসনের পথে যাবেন তারা। এবার তারা সে চেষ্টা শুরু করলেন।
প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র ৯ দিন। অনেকেই মনে করছেন এত কম সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তবে তা যে অসম্ভব নয় সে ইঙ্গিতই ডেমোক্র্যাটরা দিল সে পথে পা বাড়িয়ে।
যদিও ইমপিচমেন্ট পক্রিয়া দীর্ঘ। অভিযোগ দায়েরের পর ভোটাভুটির ধাপ পেরিয়ে সেনেট যাওয়া। এরপর সেখানে আবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা এবং তৎসংশ্লিষ্ট আরও নানা কাজ এবং শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে প্রয়োজনীয় সমর্থন লাভ— এতকিছু করতে করতে ট্রাম্পের সময়ই হয়ত শেষ হয়ে যাবে।
অবশ্য তাতেও সমস্যা নেই। কারণ, অভিশংসন চলতে পারে ট্রাম্পের সময় শেষের পরও। আর তা করা হলে ট্রাম্পকে ভবিষ্যতে কোনও সরকারি পদে আসীন হওয়া থেকে বিরত করা যাবে। সেক্ষেত্রে হয়ত ২০২৪ সালের ভোটে তিনি আর দাঁড়াতে পারবেন না।