বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সেই দিনের
বার্ষিকীতে সোমবার বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে
যে অভ্যুত্থান- এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার ছিল না। এটা ছিল বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক,
গণতান্ত্রিক শক্তিকে নির্মূল করবার জন্যেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের একটি
অংশ।
“আমরা খুব স্পষ্টভাবে দে্খেছি, যারা সেদিন অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল,
একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে, সাংবিধানিক সরকারকে উতখাত করে, তারাই পরবর্তীকালে
আজকে যাদের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, এরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন
করছে।”
ফখরুল বলেন, “আমরা সবাই জানি যে, তারই (ওয়ান-ইলেভেন) ধারাবাহিকতায়
২০০৮ সালে যখন নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে সেই শক্তির মদদপুষ্ট হয়েই আবার আওয়ামী লীগকে
ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সম্পূর্ণভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচনের
মধ্য দিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা এটাও জানি যে, ২০১৮ সালে একই কায়দায় আগের
রাত্রেই জনগণের ভোটের অধিকারকে চুরি করে, হরণ করে নিয়ে গিয়ে আবার একটি সেই অনির্বাচিত
সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়।”
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের ক্ষমতা নেওয়ার দিনটিকে
‘কালো দিবস’ দিবস হিসেবে পালনে বিএনপির উদ্যোগে ‘এক এগারো : বিরাজনীতিকরণের ধারাবাহিকতায়
চলমান ফ্যাসিবাদ: গণতন্ত্রই মুক্তির পথ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি
ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন
বলেন, “১/১১ সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দুই বছর থেকে ওরা হাতে ধরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায়
বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার ধারাবাহিকতায় আজকে পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।
তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “২০০৭ সালের ১/১১
হলো একটা কালো দিবস, একটা অভিশপ্ত দিবস। এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা
বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক মানুষের মুখে চুনকালি দেওয়া হয়েছে।
“বিরাজনীতিকরণে আজকে তারা যে সুযোগটা নিচ্ছে তার একটাই কারণ
হল প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটা অঙ্গরাজ্যে দেশটাকে পরিণত করা। ইতোমধ্যে ইনডাইরেক্টলি
হয়েই গেছে। এখন শুধু স্বীকৃতির অপেক্ষা। এখন যাতে বিএনপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল দাঁড়াইতে
না পারে, এজন্য তারা তাদের কাজ-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এক-এগারোর
যে তাণ্ডব, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন আমাদের
দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ
তার পরিবার।”
ওয়ান-ইলেভেনের মতো যেন আগামীতে বিএনপির মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি
না হয়, তা সব নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন গয়েশ্বর।
মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আজকে
গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, অর্থনীতি লুটপাট করা হয়েছে।
“এই চরম দুর্দিনে করোনাভাইরাস যখন গোটা বিশ্বের ব্যবস্থাকে
পাল্টে দিচ্ছে, তখন আমরা অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে দেখছি যে সরকারি মদদপুষ্ট যারা ব্যবসায়ী,
তারা আজকে ভ্যাকসিন নিয়েও একটা লুটপাটের আয়োজন করছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এই লুটপাটের অর্থনীতির পরিবর্তন
করতে চাই, আমরা বাংলাদেশের একদলীয় শাসনব্যবস্থা ধবংস করে দিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
“আমরা দেখতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের
সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে
এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে
পরাজিত করতে বাধ্য করবে।”
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ
উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল
মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমানও বক্তব্য রাখেন।