নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে নার্সিং হোমের কর্মী ও বাসিন্দাদের ওপর ইলাই লিলির তৈরি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিসমৃদ্ধ ওষুধটি প্রয়োগ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘সফলতার প্রমাণ’ পাওয়ার দাবি করেছে ওই কোম্পানি।
ইলাই লিলি বলছে, বয়স্ক ব্যক্তি, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও ‘সুরক্ষা’ দিতে পারছে ওই ওষুধ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সঙ্গে করা এক ওই গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে এ কোম্পানি।
তারা বলছে, নার্সিং হোমের রোগীদের মধ্যে ওষুধটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা কমে গেছে। আর নার্সিং হোমের কর্মীদের ক্ষেত্রে এ কমেছে ৬০ শতাংশ।
তাদের গবেষণালব্ধ এ তথ্য এখনও অন্য গবেষকদের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা বা পিয়ার রিভিউ করা হয়নি; এ তথ্য কোনো জার্নালেও প্রকাশিত হয়নি।
ইলাই লিলির কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই তারা তাদের গবেষণালব্ধ ফল পিয়ার-রিভিউ করে জার্নালে প্রকাশ করবেন। তবে কতদিনের মধ্যে তা প্রকাশিত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা তারা দেননি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৯৬৫ জনের ওপর ইলাই লিলির এই গবেষণা চালানো হয়। এর মধ্যে ৬৬৬ জন নার্সিং হোমের কর্মী, বাকিরা রোগী বা বয়স্ক বাসিন্দা।
এ ধরনের গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবীদের দুটি দলে ভাগ করে একটি দলকে ওষুধ দেওয়া হয় এবং অন্য দলকে দেওয়া হয় প্লাসিবো (যাতে ওষুধের কোনো গুণাগুণ থাকে না, কিন্তু রোগী ওষুধ জেনেই তা খান)। কোন দলকে ওষুধ আর কোন দলকে প্লাসিবো দেওয়া হচ্ছে, তা কাউকে বলা হয় না।
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চার জনের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়, তাদের সবাই প্লাসিবো পেয়েছিলেন, মূল ওষুধ নয়।
ইলাই লিলির ওই ওষুধের নাম ‘বামলানিভিমাব’, যা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছিল। ওই অনুমোদনের ফলেই তারা সংক্রমণের শুরুর পর্যায়ে উপসর্গ আছে এমন রোগীদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করতে পেরেছে।
তবে সংক্রমণ শুরুর আগেই ওষুধটি তা থামিয়ে দিতে পারে কিনা গবেষণায় তা দেখার চেষ্টা করেছিলেন গবেষকরা। কোনো নার্সিং হোমে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পেলেই ট্রাকে করে মোবাইল ল্যাব ও কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হতেন; এরপর ওষুধটি প্রয়োগের জন্য বানানো হতো অস্থায়ী ইনফিউশন সেন্টার।
গবেষণার ফল পর্যবেক্ষণ করা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ডেটা সেইফটি অ্যান্ড মনিটরিং বোর্ডের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর গত সপ্তাহে ওই গবেষণার সমাপ্তি টানা হয়।
এই গবেষণায় প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরের দায়িত্ব পালন করেন ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার মেডিসিনের অধ্যাপক ড. মায়রন কোহেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, “আমি যখন ফলাফলের পরিসংখ্যান দেখলাম, রীতিমত অবাক হতে হয়েছে।”
গবেষণা শেষ হলেও যেসব নার্সিং হোম এ গবেষণার নেটওয়ার্কে ছিল, সেগুলোর কোনোটিতে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়া মাত্র ইলাই লিলি আগের মতই সেখানে ছুটে যাবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড্যানিয়েল স্কোভোরনস্কি।
এর সঙ্গে জড়িত নন এমন অনেক গবেষক ‘বামলানিভিমাবের’ সফলতার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এ সংক্রান্ত সব তথ্য না দেখায় এখনি চূড়ান্ত রায় দেওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন।
আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির ড. শ্রীলতা এডুপুজান্তি বলেন, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির এ চিকিৎসায় তাৎক্ষণিকভাবে কাজ হলেও ভ্যাকসিনের মত দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা তা দেবে না।
ইলাই লিলি এখন নার্সিং হোম এবং বিভিন্ন সেবাকেন্দ্রের বয়স্ক ও দুর্বল স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ওষুধটির জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেতে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।