বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা
নিশ্চিতে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিরও
আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে ভার্চুয়ালি
অনুষ্ঠিত ‘ত্রয়োদশ বার্লিন কৃষি মন্ত্রীদের সম্মেলনে’ বক্তব্যে এই আহ্বান জানান আব্দুর
রাজ্জাক। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার (বিএমইএল) এ সম্মেলনের
আয়োজন করে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চুয়ালি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
“স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কার্যকর
সতর্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে করে আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়।
“এছাড়া ফুড সিস্টেম
তথা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত ও মজুদে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও উন্নত
দেশের আরও সহযোগিতা দরকার।”
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন,
“সেজন্য উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নয়নশীল
দেশের কৃষির উন্নয়ন, এগ্রো-প্রসেসিং, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও ফুড ভ্যালু চেইন শক্তিশালী
করতে উন্নত দেশগুলোকে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এগিয়ে আসতে হবে।”
বিশ্বের ৮০টিরও বেশি
দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম
ও অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন,
“জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেজন্য জলবায়ু
অভিঘাত সহনশীল খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রেও
উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য
রাখেন জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার জুলিয়া ক্লোকনার। জাতিসংঘের
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস,
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক
কিউ দোংয়ু, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুস্জ উজসিচোস্কি প্রমুখ বক্তব্য
রাখেন।
জার্মান সরকারের আয়োজনে
পাঁচ দিনব্যাপী (১৮-২২ জানুয়ারি) ১৩তম ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার
(জিএফএফএ)’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কীভাবে বিশ্বকে খাওয়ানো
যায়’ শিরোনামে কৃষি-খাদ্য বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সম্মেলন হয়। গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন
দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা একটি ‘যৌথ ইশতেহার’ প্রস্তুত করেছেন।যৌথ ইশতেহারে
তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
প্রথমটি হচ্ছে, কোভিড-১৯
মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে জার্মান কৃষিমন্ত্রী
জুলিয়া ক্লোকনার বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা
ছিল ৬৯ কোটি (৬৯০ মিলিয়ন)। শতকরা হিসেবে যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ। করোনাকালে
খাদ্য সরবরাহ ও বাজার স্থিতিশীল থাকলেও অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বেকারত্ব ও আয় হারিয়ে এ
সংখ্যা আরও বেড়েছে।
“বিদ্যমান এই বিশাল
ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে গত ১ বছরে আরও ১৩ কোটি ক্ষুধার্তমুখ নতুন করে যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া ২০২০ সালে ৫ বছরের নিচের আরও ৭০ লাখ শিশু চরম অপুষ্টির শিকার হয়েছে।”
ইশতেহারে গুরুত্ব পাওয়া
দ্বিতীয় বিষয় হল- ভবিষ্যতে মহামারী থেকে দূরে থাকতে ‘ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ। বলা
হয়, বিগত ৩০ বছরে মানুষের নতুন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তের ৭০ শতাংশের উৎস প্রাণি।
প্রাণি থেকে মানুষে সংক্রমিত এসব রোগের বিরুদ্ধে সবাইকে দূরে থাকতে হলে ‘ওয়ান হেলথ
অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষ, প্রাণি ও
পরিবেশের মিথস্ক্রিয়াকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং প্রাণিস্বাস্থ্যের বিশ্ব সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার
এবং প্রাণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বন্যপ্রাণির ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার উপর গুরুত্বারোপ
করা হয়।
তৃতীয় বিষয়টি হল- জলবায়ু
পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একসাথে কাজ করার
ঘোষণা।