শনিবার
দুপুরে নগরীর জামালখানে একটি রেস্তোরাঁয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজের ইশতেহার
ঘোষণা করেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।
৭৫টি
প্রতিশ্রুতি সম্বলিত এই ইশতেহারের স্লোগান করা হয়েছে ‘চলো সবাই বাঁধো জোট, এবার দেবো
আমার ভোট’।
শাহাদাত
বলেন, “রাজনীতি করছি অসহায় আর নিপীড়িত জনতার পাশে থাকতে। কতটুকু পেরেছি তার বিচারের
ভার আপনাদের হাতে। নির্বাচিত হলে আমি নগরপিতা নয়, নগর সেবক হতে চাই।”
ইশতেহারে
চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে মোটাদাগে নয়ভাগ করে মোট ৭৫টি প্রতিশ্রুতি
দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। তা বাস্তবায়নে কী করবেন, তার রূপরেখাও দেওয়া হয়েছে।
প্রধান
নয়টি ভাগ হল- জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম, স্বাস্থ্যকর চট্টগ্রাম, শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম,
গৃহকর ও আবাসন, পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম, নিরাপদ চট্টগ্রাম, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম,
নান্দনিক পর্যটন নগরী ও তথ্য প্রযুক্তি।
ইশতেহার
ঘোষণার সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ
চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ছিলেন।
জনগণকে
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মেয়র প্রার্থী।
শাহাদাত
বলেন, “নির্বাচিত হলে সাবেক সকল মেয়রসহ এক্সপার্টদের সাথে নিয়ে সুপারিশক্রমে জলাবদ্ধতা,
যানজটমুক্ত, আধুনিক নগরী গড়ে তুলব।
“নিরাপদ
চট্টগ্রাম, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবান্ধব,
তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগরী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়তে মেয়রপদে ভোট চাই।”
শাহাদাত
ইশতেহারে বলেন, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা
প্রকট আকার ধারণ করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সব খাল উদ্ধার করে খনন করা হবে পানি চলাচলের
ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ষার আগে প্রতি বছর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল, নালা-নর্দমা সংস্কারসহ
পানি চলাচলের উপযুক্ত করা হবে।
ড্রেনেজ
মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর
পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ইশতেহারে উল্লেখ করেন তিনি।
নগরীতে
অবহেলিত বিভাগগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ অন্যতম উল্লেখ করে পেশায় চিকিৎসক শাহাদাতের
ইশতেহারে বলা হয়, সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলোর সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি শয্যা
সংখ্যা বাড়ানো হবে। কোভিড-১৯ সহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে
তোলা হবে।
নির্বাচিত
হলে বর্তমান গৃহকরের প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও সহনীয় রাখার ঘোষণা ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন
বিএনপি প্রার্থী।
এছাড়া
শিক্ষাবান্ধব নগরী, আবাসন সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
পরিচ্ছন্ন
চট্টগ্রাম গড়তে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগে লোকবল বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি
সংযোজন, সংগ্রহ করা বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী করা, বহুতল
ও আবাসিক এলাকার প্রতিটি ঘর থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন
তিনি।
নিরাপদ
চট্টগ্রাম গড়তে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, নান্দনিক পর্যটন
নগর ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত তার ইশতেহারে
বলেছেন।
ইশতেহারে
নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়তে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তার সাথে প্রশস্ত
ফুটপাত গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছেএতে করে ট্রফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে উল্লেখ করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় সাধন করার কথাও বলা হয়েছে।
নান্দনিক
পর্যটন নগরী গড়তে বায়ুদূষণ রোধে চট্টগ্রামে করপোরেশনের উদ্যোগে ইলেকট্রিক বাস চালু
করা হবে উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়েছে।
এছাড়াও
বলা হয়েছে,রাস্তাগুলোতে সাইকেলের জন্য আলাদা লেইন করা হবে, যানজট নিরসনে পর্যাপ্ত ট্রাক
ও বাস টার্মিনাল তৈরি করা হবে। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানে বিশেষ প্রকল্প নেয়া
হবে।
চট্টগ্রামে
দেশী-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন শাহাদাত।
নির্বাচিত
হলে নগরীতে বিশেষ আইপার্ক স্থাপন করা হবে উল্লেখ করে তিনি ইশতেহারে বলেন, সিটি করপোরেশন
পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রি ওয়াই ফাই ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স,
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন সেবা অনলাইনে করার উদ্যোগ নেওয়া
হবে।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির
সদস্য আমীর খসরু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া মানে আপনার ভোট
কেড়ে নেয়া। আপনার আত্মীয়স্বজনদের ভোট কেড়ে নেয়া। অন্তত চট্টগ্রামবাসী যাতে তাদের ভোটাধিকার
প্রয়োগ করতে পারে, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ
থাকতে হবে।”
ইশতেহার
ঘোষণার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম,
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর
উপস্থিত ছিলেন।
আগামী
২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি প্রার্থীর
মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী।