শনিবারের এসব সমাবেশ ভাঙতে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী আইনজীবী নাভলনিকে গত বছর অগাস্টে রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন নাভালনি।
জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত রোববার দেশে ফেরেন।
রাশিয়ায় ফেরার পর বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি। অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে পরদিন সোমবার মস্কোর একটি আদালত তার ৩০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
তারপরই সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান তিনি।
লোকজনকে এই প্রতিবাদ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছিল, বিক্ষোভে অংশ নিলে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে পাশাপাশি অননুমোদিত এসব আয়োজনে উপস্থিত হলে মামলা ও কারাবাসেরও সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু প্রতিবাদকারীরা কর্তৃপক্ষের এসব নিষেধাজ্ঞা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মস্কোর কেন্দ্রস্থলে অন্তত ৪০ হাজার লোক জমায়েত হয়েছিল। গত কয়েক বছরে রাশিয়ার রাজধানীতে এত বড় অননুমোদিত সমাবেশ আর হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।
এখানে পুলিশ যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই ধরে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেছে।
কিন্তু মস্কোর জমায়েতে মাত্র চার হাজার লোক হয়েছিল বলে দাবি করেছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই সংখ্যা অত্যন্ত বেশি ছিল বোঝাতে ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি ব্যবহার করেছে বলে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে।
নিজেদের দাপ্তরিক ম্যাসেঞ্জার চ্যানেলে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, “কেন তাৎক্ষণিকভাবে বললে না ৪০ লাখ জড়ো হয়েছিল?”
‘পুতিন একজন চোর’, ‘লজ্জা, লজ্জা’ ও ‘নাভালনিকে মুক্ত কর!’ বলে শ্লোগান তুলেছিলেন কিছু প্রতিবাদকারী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া জানিয়েছেন, সমাবেশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবাদের আগেরদিনই নাভালনির কিছু রাজনৈতিক মিত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; অন্যান্যদের বিক্ষোভ চলাকালে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতিবাদ পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী ওভিডি-ইনফো জানিয়েছে, রাশিয়াজুড়ে অন্তত এক হাজার ৬১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মস্কো থেকে ৫১৩ জন ও সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ২১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
রাশিয়ার প্রায় ৭০টি শহর, নগর থেকে প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওভিডি-ইনফো।
পূর্বের খাবারোভক্স অঞ্চলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বার বার জনগণকে ঘরে থাকার বিষয়ে সতর্ক করলেও তা উপেক্ষা করে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারপাতের মধ্যে লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে।
নাভালনির সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে রাশিয়ার প্রায় ৭০টি শহরে সমাবেশের আয়োজন করতে সক্ষম হয়।