শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ৩৭ দফার ইশতেহার
ঘোষণা করেন নৌকার এই প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. অনুপম সেন, কেন্দ্রীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন
চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে পাশে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
রেজাউল বলেন, “একটি জনপদ বা নগর তখনই নান্দনিক, পরিচ্ছন্ন,
পরিবেশবান্ধব ও বাস উপযোগী হয়, যখন সব নাগরিক নিজের বাসগৃহের মতো এটার যত্ন নেয়। আমরা
পারিনি কারণ অধিকার বা দাবি সচেতন হলেও আমাদের মাঝে নাগরিক দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট অভাব
রয়েছে। আমি নিজেও এই দায় এড়াতে পারি না।”
ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজাউল বলেন,
“এই শহরে এককভাবে অনেকে অনেক চিন্তা করেন। ব্যক্তি ও সমষ্টির চিন্তা পার্থক্য আছে।
অতীতে অনেকে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে উনাদের চিন্তার সাথে আমার চিন্তা নাও মিলতে পারে।
“সব মতের মানুষের মতামত নিয়ে অতীতকে ফেলে নতুনের দিকে এগোতে চাই। সবার সাথে পরামর্শ
করে সবার মেধাকে কাজে লাগাব। সেই পরামর্শ যদি মানুষের উপকারের হয়, টেকসই হয়, বাস্তবায়নযোগ্য
হয় তাহলে সব কাজে লাগাব।”
এস এম কামাল বলেন, “নেত্রী নৌকা প্রতীক যাকে দিয়েছেন, তিনি
চট্টগ্রামের মানুষের কাছে একজন সৎ, সাদা মনের মানুষ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়াত নেতা
মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে
নগরীকে আধুনিক চট্টগ্রাম হিসেবে গড়ে তুলবেন।”
জলাবদ্ধতায় ভরসা
মেগাপ্রকল্প
ইশতেহারে ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতিতে প্রধান কয়েকটি হল- জলাবদ্ধতা
নিরসন, ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে
আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
পাশাপাশি পর্যটন রাজধানী হিসেব চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং
ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতিও দেন মেয়র
প্রার্থী রেজাউল।
বন্দর নগরীর ‘সবচেয়ে পুরনো ও বড় সংকট’ জলাবদ্ধতা নিরসনে
চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ‘ঠিকমত বাস্তবায়নেই’ সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
নগরীর দখলকৃত খাল নালা নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনের
উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ‘ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা’ চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের
কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি।
যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে যত দ্রুত সম্ভব
তা দূরীকরণে মনোযোগ দেবেন বলে রেজাউলের আশ্বাস। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজিটাল ট্রাফিক
সিস্টেম এবং নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালু করতে চান তিনি।
নালা খাল নদীর দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পাশাপাশি
খাল নদীর নাব্যতা ফেরাতে চান রেজাউল করিম।
বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানো, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জের
ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরির আশ্বাস
দেন তিনি। আর্বজনা অপসারণে ডোর টু ডোর কার্যক্রম জোরালো করতে নজরাদারি বাড়াতে চান আওয়ামী
লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম।
পর্যটন সুবিধা কাজে লাগিয়ে ও সৈকত পর্যটনের আধুনিক সুবিধা
যোগ করে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের উপর জোর দেন তিনি।
গৃহকর নিয়ে ‘নানা সময়ে বিতর্ক’ তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে
রেজাউল করিম বলেন, “বিতর্ক অবসানে ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া কেউ যাতে
ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে।”
অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত
করার কথাও ইশতেহারে জানান রেজাউল।
স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার
কথা বলেন তিনি।
‘আওতার বাইরের’ স্বাস্থ্যসেবা সিটি করপোরেশনের উপর বাড়তি
চাপ তৈরি করে দাবি করে রেজাউল এই সেবা নিশ্চিত করতে সাতটি প্রস্তাবনা দেন।
এরমধ্যে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ও করপোরেট গ্রুপকে এ খাতে যুক্ত
করা, চলমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতগুলো উন্নত করা, বন্ধ থাকা হাসপাতাল ও মাতৃসদন
আবার চালু, আর্থিক সহায়তা পেলে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মেডিকেল কলেজ ও পাঁচশ শয্যার
হাসপাতাল চালুর প্রতিশ্রুতিও আছে।
অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে- রাজস্বসহ সব সেবা খাতে পূর্ণাঙ্গ
ডাটাবেজ তৈরি করে সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, সমন্বয় করে নগরীর
সব উন্নয়ন ও সেবাখাতকে এক ছাতার নিচে আনা, সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
খেলার মাঠ রাখার উপর জোর দেয়া, রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ও ফুটপাত দখল নিয়ন্ত্রণ, খেলা
ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানো, পাহাড় কাটা বন্ধ ও জলাধার-পুকুর দিঘী ভরাট কঠোরভাবে
নিয়ন্ত্রণ, কিশোর অপরাধ গ্যাং, মাদক ও অপরাধের আখড়া গুড়িয়ে দেয়া এবং নাগরিক তথ্যসেবাসহ
সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় রাখা।
‘প্রকল্পে যত বরাদ্দ
লাগে প্রধানমন্ত্রী দেবেন’
ইশতেহার ঘোষণার পর এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মেয়র আ জ ম
নাছির উদ্দীন বলেন, “সিটি করপোরেশনের বকেয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রকল্পে ম্যাচিংফান্ডের
টাকা দিতে হয়। এটা কোনো মাথাব্যথা হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রার্থী রেজাউল
করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আশা করি, যত প্রকল্প প্রয়োজন এবং যে বরাদ্দ লাগবে তার
সবই উনাকে প্রধানমন্ত্রী দেবেন।”
প্রশ্নের জবাবে রেজাউল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ
করার কথা বলেছেন। শুধু স্মৃতি সৌধ নয় এই নগরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অনেক কিছু
আছে।
“লক্ষ্য নগরীর সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে কিভাবে নান্দনিক
আধুনিক শহর করা যায়। নতুন প্রজন্ম যেন জানতে পারে চট্টগ্রামে ছয় দফা ঘোষণা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের
অনেক স্মৃতি চট্টগ্রামে আছে। কারো সাথে পরামর্শ না করে চট্টগ্রামকে সাজাবো না। সবার
মত নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”
লিখিত ইশতেহারের শেষাংশে রেজাউল করিম বলেন, “নগরীর বিপুল
জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। আমার কিছুই পাওয়ার নেই। সুযোগ
পেলে মেধা-মনন, কর্মে সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার অঙ্গীকার।”
ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে নগর আওয়ামী
লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্র্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী
বাচ্চু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক
শেখ আতাউর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য
উপস্থিত ছিলেন।