করোনাভাইরাস
মহামারীর মধ্যে পরিস্থিতি বুঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আগে খুলে দেওয়ারও সুপারিশ এসেছে
তার কাছ থেকে।
আন্তর্জাতিক
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে রোববার বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা
সভায় যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি
বলেন, “একটি কথা বলতে চাই, আমার এই কথাটি সরকারি মহলে প্রিয় নয়, জানি। সেটা হল- পঞ্চম
শ্রেণির ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কিন্তু অভিযোগ আছে। আমার মনে হয় যারা
দেশ চালাচ্ছেন, নীতি নির্ধারণ করছেন, তাদের সামনে গিয়ে যারা কথা বলেন, তারা সত্যি কথাটি
হয়ত প্রকাশ করেন না।
“অভিভাবক
ও ছাত্রছাত্রীরা এভাবে খুব অসহায় বোধ করেন। কিন্তু যারা প্রাইভেট পড়ায় ও নোট-গাইড প্রকাশের
অভিপ্রায় আছে, তারা কিন্তু মহাখুশি। তাই দৃঢ়ভাবে সুপারিশ হবে- এই কোভিড-১৯ এর কারণে
এবার এই দুই পরীক্ষা হয়নি; একে স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া যায় কি না, সেই চিন্তা বোধ হয়
করা দরকার।”
২০০৯
সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের
জন্য ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। আর ২০১০ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
এ দুই
পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকলেও অনেক শিক্ষাবিদ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এসব সমাপনী
পরীক্ষার পক্ষে নন।
অনুষ্ঠানে
ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের আলোকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী
পরীক্ষা ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে নানা মত রয়েছে।
“বিশেষ
করে প্রাথমিকের পরীক্ষাটি নিয়ে অধিকাংশ মানুষই বলছেন তারা এটি চান না। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা
নানা জায়গায় হচ্ছে। এটি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে নেই। তারপরও এগুলো
নিয়ে আমরা ভেবে দেখছি।”
ফরাসউদ্দিন
বলেন, মহামারীতে ছোট বাচ্চাদের ‘ঝুঁকি কম’, সেজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার
ব্যবস্থা করা যায়।
“সপ্তাহে
তিন দিন দুই শিফটে ক্লাস হতে পারে। এভাবে করলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে।
তবে শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাটুনি হবে। সেজন্য সরকার একটা অতিরিক্ত বেসিক বেতন দিয়ে অনুপ্রাণিত
করতে পারে।
“আশা
করা যায়, যেহেতু টিকা চলে এসেছে, এটা আমাদের স্বস্তির বিষয়। টিকা দেওয়া গেলে চলতি বছরের
মধ্যে কোভিড অনেকটাই শেষ হবে।”
এসএসসি
ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তিন মাস ক্লাস করাতে পারলে মে মাসের শেষে
এসএসসি এবং জুনের শেষে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলেও মত দেন ফরাসউদ্দিন।
প্রাথমিক
বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে ফরাসউদ্দিনের পরামর্শের আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হাসিবুল
আলম বলেন, “আপনার প্রস্তাব লিখে রেখেছি, আমরা চেষ্টা করব। শিক্ষকরা স্কুলে আসছেন, তারা
দৈনন্দিন নানা কাজ করছেন।”
শিক্ষামন্ত্রী
দীপু মনি বলেন, “আমরা পরীক্ষানির্ভর সনদ সর্বস্ব ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা
করছি। শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন তিনটি বিষয়ের পর আরও বিষয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। অষ্টম শ্রেণির
পর এখন ভাগ হয়ে যায়, (পরিকল্পনা করছি) দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই একই সিলেবাস পড়বে, বছরভিত্তিক
পরীক্ষা হবে, বছর শেষে অনেক কম নম্বরে পরীক্ষা হবে। এতে চাপ কমবে।”
ফলাফলের
ওপর অভিভাকদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জিপিএ-৫ পেলে অভিভাবকদের
মিষ্টির ছড়াছড়ি, কম পেলে কবরের নিস্তব্ধতা, এরকম যাতে না হয়। শিক্ষা কোনো বইয়ের বোঝা
নয়, শিক্ষা যেন আনন্দময় হয়।”
শিক্ষা
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, পোস্ট কোভিড কার্যক্রমে পাঠদান, দক্ষ জনসম্পদ
সৃষ্টিতে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। শিক্ষা প্রশিক্ষণে প্রাইভেট পার্টনারশিপের বিষয়ে
অনেক সুযোগ আছে। এখানে ব্যাপক পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
মাধ্যমিক
ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা
বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, ইউনেসকোর বাংলাদেশের প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালডুন সভায়
বক্তব্য দেন।