ওই দিন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে। এরপর আরও ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আর সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ওই টিকা পেতে আগ্রহীদের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হবে।
‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে।
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকার জন্য অনলাইন নিবন্ধন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামারদের নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
“আগামী ২৭ তারিখ বিকেল সাড়ে ৩টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ঠিক সেই সময়েই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিস্ট্রেশনটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তাহলে যেটা হবে তখন এটা উন্মুক্ত হবে। তার আগ পর্যন্ত কিন্তু এই www.surokkha.gov.bd সেটাও রেজিস্ট্রেশনের জন্য উন্মুক্ত নয়, অ্যানড্রয়েড অ্যাপও না।”
তিনি বলেন, “আমরা সাথে সাথে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করে রাখছি। যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আমাদের নির্দেশ দেয় তাহলে আমরা এটা উন্মুক্ত করে দেব।”
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া কেউ কোভিড-১৯ এর টিকা পাবেন না।
কোভিড-১৯: টিকার জন্য নিবন্ধন কীভাবে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এই অ্যাপের বাইরে যাব না। কারণ আমাদের সমস্ত ডেটাগুলো একসঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে, এটা অ্যানালাইসিস করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা এই ডেটাগুলোকে অনেকগুলো কাজে লাগাতে পারব।
“ভবিষ্যতে ভ্যাক্সিনেশনের ক্ষেত্রে আমরা এটাকে রোল মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে এগোতে পারব। কাজেই আমরা ডিসকারেজ করব। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী হবে, সেটা আমরা জানি না। তবে আমরা এখন পর্যন্ত বলছি, আমরা এই অ্যাপের বাইরে কাউকে অ্যালাউ করব না।”
নিবন্ধনের সময় টিকা নেওয়ার জন্য যে কেন্দ্র নির্বাচন করা হবে, তা পরিবর্তন না করার জন্য পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
শুরুর ৫০ লাখ টিকার অর্ধেকই বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য
প্রতিদিন দেওয়া হবে দুই লাখ ডোজ টিকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “প্রতিটি কেন্দ্রে যে পরিমাণ চাহিদা থাকবে সেই পরিমাণ টিকা আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে হবে। আপনারা জানেন একটা ভায়েলের মধ্যে ১০টা ডোজ থাকবে। কাজেই সে যদি চেঞ্জ করে কেন্দ্রটা তাহলে আমাদের অনেক ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যাবে।”
টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। কবে তা দেওয়া হবে, সেই তথ্য প্রত্যেককে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কেউ ওই তারিখে দ্বিতীয় ডোজ নিতে না পারলে তিনি ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে কোনো দিন তা নিতে পারবেন বলে জানান ডা. খুরশীদ আলম।
তবে নির্ধারিত তারিখেই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সবাইকে বলব যে, একদম বিশেষ কারণ না হলে পরে কেউ যেন ডোজটা নেওয়ার তারিখটা মিস না করেন। তা না হলে আসলেই টিকার আপচয় হবে। এবং নির্দিষ্ট দিনে যদি না থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে যদি না থাকে তখন আমাদেরও ইনফরমেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানও উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ডেভেলপের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, “এটা একটা যুগান্তকারী কাজ।”
ভারতের বাইরে বাংলাদেশই ‘সবচেয়ে স্বল্প মূল্যে’ টিকা পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
২৭ জানুয়ারি প্রথম কোভিড-১৯ টিকা পাবেন একজন নার্স
কোভিড-১৯ টিকা থাকছে কোথায়, কারা কীভাবে পাবে?
নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণ যেভাবে:
# www.surokkha.gov.bd ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে।
# ‘নিবন্ধন’ বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণি সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্মতারিখ দিতে হবে। তারপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় যথাযথ হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা অন্য কোনো উপসর্গ আছে কি না সে বিষয়ে হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।
# নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরাসরি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জড়িত কি না তা নির্বাচন করতে হবে।
# যে মোবাইলে টিকা সংক্রান্ত তথ্য ও ভেরিফিকেশনের এসএমএস পেতে চান, তা নিবন্ধনের সময় দিতে হবে।
# ফর্মে বর্তমান ঠিকানা ও টিকা কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে।
# সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপিP দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
# নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
# নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানানো হবে।
# টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্ট করা টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সাথে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সুরক্ষা’ সিস্টেমের নানা দিক তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়-
# সেলফ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনলাইন নিবন্ধন ও ভ্যাক্সিন কার্ড ডাউনলোডের ব্যবস্থা রয়েছে।
# ভ্যাক্সিন গ্রহণ ও ভ্যাক্সিন প্রদানের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে যাচাই ও মনিটর করা যাবে।
# ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুরক্ষা সিস্টেম থেকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
# জাতীয় পরিচয়পত্রের গেটওয়ে ‘পরিচয়’ এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হবে।
# নিরাপদ নিবন্ধন নিশ্চিতে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠানোর পাঠানো ব্যবস্থা থাকবে।
# এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার তারিখ ও তথ্য দেওয়া যাবে।
# নাগরিকের ডোজ গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য কিউআর কোডের মাধ্যমে নেওয়া এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।
# টিকা প্রদান সম্পর্কিত বিভিন্ন তালিকা, পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের ব্যবস্থা থাকছে।
# জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।